আলিবাবার অভিজ্ঞ নেতৃত্বে লাভবান হবে দারাজ: সৈয়দ মোস্তাহিদল হক

প্রকাশ: শুক্রবার, ০৪ মে, ২০১৮
Image উজ্জ্বল এ গমেজ
Techvoice আলাপন
  ছবি: সংগৃহীত
২০১২ সালে ই-রিটেইলার ব্র্যান্ড হিসেবে দারাজ প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তানে। পরে ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশে। সময়ের সাথে সাথে এটি সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন শপিংগন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য অনলাইনে বিক্রি করা হয়।

দারাজ ছিল এশিয়া প্যাসিফিক ইন্টারনেট গ্রুপের (এপিএজিআইসি) একটি অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠান। এপিআইজিএসি হচ্ছে জার্মানিভিত্তিক রকেট ইন্টারনেট ও অরেডোর একটি যৌথ উদ্যোগ। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম দারাজডটকমডটবিডি-র ১০০% শেয়ার কিনে নিয়েছে চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা। দারাজ দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের পুরো ব্যবসাই আলিবাবা'র কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।

টেকভয়েস২৪-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব তথ্য জানান দারাজ বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ মোস্তাহিদল হক। 

সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে দারাজডটকমডটবিডির প্রধান কার্যালয়ে তিনি মুখোমুখি হন টেকভয়েস২৪-এর। দারাজের বর্তমান অবস্থা, প্রতিষ্ঠানটি আলিবাবা গ্রুপের সদস্য হওয়ায় দেশীয় ই-কমার্সে এর প্রভাব, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত ৪০ দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনসহ সমসাময়িক নানান বিষয় আলাপে উঠে আসে। দীর্ঘ আলাপের কিছু অংশ টেকভয়েস২৪-এর পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছেন প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ। 

টেকভয়েস২৪: আলিবাবা গ্রুপের সদস্য হলো দারাজ। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক : বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ই-কমার্সের বিকাশ ঘটছে বেশ দ্রুত গতিতে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও নেপালের বৃহত্তম ই-কমার্সকোম্পানি দারাজ গ্রুপকে কিনে নিয়েছে চীনের বিখ্যাত ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবা। দারাজ কিনে নেয়ার মাধ্যমে আলিবাবা এখন দক্ষিণ এশিয়ায় ই-কমার্সের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। আগে থেকেই ভারতে আমাজন শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। কিন্তু ভারত-চীন বৈরি সম্পর্কের কারণেই হয়তো আলিবাবা সেখানে ঢুকতে পারছিল না। দক্ষিণ এশিয়ার বাজার দখলের জন্য আলিবাবা এবং আমাজনের মধ্যে এটাকে একটা বড় লড়াইই বলা যায়।

টেকভয়েস২৪: এই চুক্তির ফলে দারাজ কীভাবে লাভবান হবে?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক : দারাজ আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই থাকবে। আলিবাবা ইকোসিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত হলেও দারাজের ব্র্যান্ড নামে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এখন আলীবাবার সঙ্গে যোগ হয়ে এটার পরিসর বেড়েছে। সঙ্গত কারণেই এর কার্যক্রম বাড়বে। ব্যবসা হবে, আয় হবে। দেশের অনেক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। সব কিছু আন্তর্জাতিক মানের হবে। আলিবাবার অভিজ্ঞ নেতৃত্বে প্রযুক্তি, অনলাইন কমার্স, মোবাইল পেমেন্ট এবং লজিস্টিকস দ্বারা লাভবান হবে দারাজ।

টেকভয়েস২৪: বাংলাদেশে আলিবাবার মতো ইন্টারনেট জায়েন্টের প্রবেশ নিয়ে স্থানীয় ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দেশের ই-কমার্সে এর কী কোনো প্রভাব পড়বে?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক : আলিবাবা আন্তর্জাতিক মানের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এমন একটা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসছে এটা তো আমাদের জন্য আশার দিক। আমাদের দেশে ই-কমার্সের ইকোসিস্টেমটা এখনও তেমনভাবে গড়ে উঠেনি। এটি ই-কমার্সের ব্যাপারে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারবে। আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে মানুষের সেরকম বিশ্বাস বা আস্থা তৈরি হয়নি। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই পেমেন্ট হয় 'ক্যাশ অন ডেলিভারি' পদ্ধতিতে। বাইরের বড় কোম্পানিগুলো তাদের প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে এখানে ই-কমার্সের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।এবং এ ব্যাপারে ভোক্তাদের আস্থাও বাড়িয়ে দিতে পারে।

টেকভয়েস২৪: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে মার্কেটে দারাজের বর্তমান অবস্থা কেমন?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক : গত কয়েক বছর ধরে কেনাকাটার বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের নাম দারাজ অনলাইন। দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম দারাজডটকমডটবিডি। অনলাইনে খুব সহজে শপিং করার সুযোগ করে দিয়েছে দারাজ। দারাজের ওয়েবসাইটে ফ্যাশন, ইলেক্ট্রনিকস, মোবাইল, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, গ্রোসারী পণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় তিন লাখেরও বেশি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে কোম্পানিটি সফলভাবে অনলাইন মার্কেটপ্লেস পরিচালনা করছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে এটির পরিচিতি অনেক বেড়েছে। সার্বিকভাবে বলতে গেলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে দারাজের অবস্থান খুবই ভালো।

টেকভয়েস২৪: প্রতি বছরই রমজান মাস উপলক্ষে দারাজ নানান পরিকল্পনা করে থাকে। এবারের পরিকল্পনা কী?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক : দারাজ বাংলাদেশ রোযা ও ঈদ উপলক্ষে আয়োজন করেছে ৪০ দিনব্যাপী ক্যাম্পেইন। ৪ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৪টি ধাপে উদযাপন করা হবে এই ক্যাম্পেইন। ৩ লাখেরওবেশি পণ্য দারাজ (daraz.com.bd) ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত থাকবে, যার ওপর পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৭৫% পর্যন্ত ছাড়। আরও রয়েছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট ভাউচার।

টেকভয়েস২৪: ক্যাম্পেইনটি সম্পর্কে যদি একটু বিস্তারিত বলতেন?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক : অবশ্যই বলবো। ক্যাম্পেইনের প্রথম ধাপ প্রি-রমজান শুরু হয়েছে ৪ মে থেকে, চলবে ১৭ মে পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে গ্রোসারিতে সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট থাকবে ৩০%, ফ্যাশনে৭৮%, ধর্মীয় পণ্যে অর্থাৎ আতর, জায়নামাজ, হিজাব ইত্যাদিতে থাকবে সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট ৭৫%।

দ্বিতীয় ধাপ রমজান শপিং ফেস্ট শুরু হবে ১৮ মে, চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। এই সময়ে গ্রোসারি ও ফ্যাশন পণ্যের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৬৭% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে অন্যান্য ক্যাটাগোরি যেমনইলেক্ট্রনিক্স, অ্যাপ্লায়েন্স, হোম ও লিভিং, স্পোর্টস ও ফিটনেস, বই ও স্টেশনারি ইত্যাদিতে।

এরপর তৃতীয় ধাপে রয়েছে ঈদ মোবাইল মেলা, যা শুরু হবে ২৫ মে থেকে, চলবে ২ জুন পর্যন্ত। স্যামসাং, শাওমি, সিম্ফনি, হুয়াওয়ে -এর মতো নামকরা ব্র্যান্ডসহ ইনফিনিক্স, জেনারেল মোবাইলেরমতো রকমারি মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট থাকবে এই সময়। সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট ৭৫%পর্যন্ত।

ক্যাম্পেইনের চতুর্থ ও শেষ ধাপে রয়েছে ঈদ শপিং ফেস্ট, যা শুরু হবে ৩ জুন থেকে এবং চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। ঈদের বিশেষ গ্রোসারি আইটেম, ঈদ স্পেশাল ফ্যাশন আইটেম, টিভি-অডিও-ক্যামেরাএবং অ্যাপ্লায়েন্স- এই ক্যাটাগোরিগুলোতে বিশেষ ডিসকাউন্ট থাকবে এই সময়। অনলাইনে ঈদের কেনাকাটায় ডিসকাউন্ট থাকবে সর্বোচ্চ ৭৫% পর্যন্ত।

টেকভয়েস২৪: গ্রাহকরা দারাজের পণ্য কিনবে কেন?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক : দারাজ সব সময় গ্রাহকদের সেরা সার্ভিসটা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। আমাদের লক্ষ্য এই কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে যেন কোনো রকমের ঘাটতি না থাকেএবং ক্রেতাদের কোনোরকম খারাপ অভিজ্ঞতা যাতে না হয়। আমরা সময়মতো তাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি এবং ফিডব্যাক নিচ্ছি। আমাদের চিন্তা হলো ক্রেতাদের পছন্দ ও রুচি অনুসারে তাদেরকাছে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়া।

টেকভয়েস২৪: ই-কমার্স সেক্টরে কর্মসংস্থানের সম্ভবনা কেমন দেখছেন?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক : বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দ্রুত বাড়ছে। অনলাইনে কেনাকাটা করার আগ্রহও বাড়ছে । এ দিক থেকে ই-কমার্সে কর্মসংস্থানে সম্ভাবনা অনেক। এরকম অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কাজ করছেন হাজার হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারি। ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক ই-কমার্স কোম্পনি শুরু হচ্ছে। অনেকে এ ব্যবসায় এগিয়েআছেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

image

আপনার মতামত দিন