দেশসেরা হতে চান শিশুসাংবাদিক শাকিল

প্রকাশ: রবিবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png উজ্জ্বল এ গমেজ
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
ছোটবেলায় অন্য পাঁচটা শিশু মতো আমিও পথেঘাটে ধূলোবালিতে খেলতে পছন্দ করতাম। বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম। পুকুরে, নদীতে দল বেঁধে লাফালাফি করতাম। দেশি-বিদেশি জাতের কবুতর ও ঘুঘু পালন করতাম। আমি তখনো ভাবিনি জীবনে কখনো সাংবাদিকতা করব। স্কুলে পড়ার সময় গ্রামের এক বড় ভাইয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমার সাংবাদিকতার শুরু। এরপর থেকে প্রতিদিন করছি নানান চ্যালেঞ্জিং কাজ।

বলছিলেন বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমের হ্যালো ও প্রিজমের শিশুসাংবাদিক শাকিলুর রহমান। শাকিল মাত্র মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। এরই মধ্যে দেশের প্রথম সারির নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ডটকমের জনপ্রিয় বিভাগ হ্যালো এবং প্রিজমে শিশুসাংবাদিক হিসাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যেই তিনি প্রিজমডটবিডিনিউজ২৪ডটকমের ভিডিও নিউজের জন্য একটা স্যামসাং গ্যালাক্সি মোবাইল পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ে ও বিডিনিউজ২৪ডটকম থেকে আরো নানা পুরস্কার। তার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। আর তাই তো পড়াশুনার ফাঁকে প্রতিদিন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিভা বিকাশের সংগ্রাম।


সম্প্রতি কথা হয় এই শিশুসাংবাদিকের সঙ্গে। জানালেন পড়াশুনার পাশাপাশি সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিনি প্রতিনিয়ত কীভাবে মুখোমুখি হচ্ছেন নানা ধরনের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সঙ্গে। মফস্বলে একজন শিশুসাংবাদিক নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কীভাবে সাংবাদিকতা পেশাকে হৃদয়ে ধারণ করছেন, টেকভয়েস২৪-এর পাঠকদের এই পর্বে শোনাব সেই গল্প।

শাকিল বলেন, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার এক বড় ভাই আমাকে একদিন বলেন, ‘আমি একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করছি। তুমি কী করবা? করলে দীঘা ইউনিয়নের প্রতিনিধি করে দিতে পারি’। কোনো আগপিছ চিন্তা না করেই আমি রাজি হয়ে গেলাম। শুরু করলাম সাংবাদিকতা নামক চ্যালেঞ্জিং পেশার জন্য প্রস্তুতি। ওই বড় ভাইয়ের আন্তরিক সহযোগিতা ও নিয়মিত ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন অনলাইন ও জাতীয় দৈনিকের খবর পড়ে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করি।

গ্রামে বেড়ে ওঠা শাকিলের মনে ততোদিনে সাংবাদিকতার প্রতি ইতোমধ্যেই আলাদা একটা টান তৈরি হয়ে গেছে। যে কোনো মূল্যেই তাকে রাজধানী ঢাকার কোনো একটা জাতীয় সংবাদমাধ্যমে কাজ করতে হবে। তাই খুঁজছিলেন সুযোগ। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে তার পরিচয় হয় মো. আলাউদ্দিন নামে এক শিশুসাংবাদিকের সঙ্গে। তিনি শাকিলকে ‘হ্যালোডটবিডিনিউজ২৪ডটকম’ অনলাইন নিউজ পোর্টালে শিশু সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেন। এরপর শাকিলের পরিচয় হয় সাপ্তাহিক ‘অর্থকাল’ পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে। তিনি শাকিলকে ‘অর্থকাল’-এর শিশুপ্রতিবেদক করে দেন।

তিন ভাই-বোনের মধ্যে শাকিলের স্থান তৃতীয়। বাবা সাইফুর রহমান একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা এবং মা গৃহিনী। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের পাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও পাল্লা বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন শাকিল।

তার ভাষায়, সাংবাদিকতা করার জন্য অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিডিনিউজ২৪ডটকমে রিপোর্টার কাজী নাফিয়া রহমান, নীল আহমেদ, ফটোসাংবাদিক আসিফ মাহমুদ অভি, একাত্তর টিভির মাগুরা জেলা প্রতিনিধি শরীফ তেহরান টুটুল, বিডিনিউজ২৪ডটকমের শিশু সাংবাদিক আমিনুর রহমান হৃদয়, শেখ শরফুদ্দিন রেজাসহ আরও অনেকে আমাকে প্রতিনিয়ত সাহস ও উৎসাহ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

প্রতিদিন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় শাকিলকে। তিনি বলেন, বিডিনিউজের হ্যালোতে কাজ করতে গিয়ে নানান দিক নির্দেশনা পেয়েছি বিডিনিউজ২৪ডটকমের প্লেটো দাদা, নাহার ও মহুয়া আপুর কাছ থেকে। সরজমিনে গিয়ে কীভাবে নিউজ তৈরি করতে হয় আমাকে এসব কলাকৌশল শিখিয়েছেন তারা।

যখন কোনো সংবাদ পত্রিকায় ছাপানো ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভিডিও নিউজ প্রকাশ করা হয় তখন শাকিলের খুব ভালো লাগে। শাকিল বলেন, আমার অভিজ্ঞতা খুবই অল্প। বিভিন্ন সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে রকমারি অভিজ্ঞতা করেছি। আমার কাছে সাংবাদিকতা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। তবে আমি এই কাজকে উপভোগ করি। কষ্টের মাধ্যমে অর্জনে পাই অনেক আনন্দ। এখন আমার পরিবার আমাকে সাংবাদিকতা পড়ানোর পরিকল্পনা করছে। তাদের মতে, এখানে সম্মান, সম্মানী, যশ-খ্যাতি সবই মেলে। নিজের প্রতিভা, যোগ্যতা, দক্ষতা প্রমাণ করার অনেক জায়গা রয়েছে এই পেশায়।

‘হিজড়া শিশুরা কষ্টে আছে’ ও ‘ভিক্ষেনির্ভর মুক্তিযোদ্ধার জীবন’ এরকম বেশ কয়েকটি সংবাদ বিডিনিউজের হ্যালো ও প্রিজমে প্রকাশিত হওয়ার পর পরিচিতি বেড়েছে তার। এই নিউজ প্রকাশের পর ঢাকার একজন গার্মেন্ট শ্রমিক সুবিধাবঞ্চিত এক শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা করেন। বিডিনিউজে সংবাদ প্রকাশের পর মহম্মদপুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের তিনটি কাঁচা রাস্তা পাকা করা হচ্ছে। সোনাপুর গ্রামের বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে হাট বসতো। হ্যালোতে সংবাদ প্রকাশের পর মাঠ দখলমুক্ত হয়েছে। ‘সোনাপুর বাঁশের সাঁকোর বেহাল অবস্থা’ সংবাদটি প্রকাশের পর একটি ছোট সেতু নির্মাণ করা হয়। এসব ঘটনা তাকে কাজের ব্যাপারে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।

শাকিল বলেন, কোনো ভালো নিউজ করলে বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী স্যার যখন ইউনেসেফের ফেসবুকে শেয়ার করেন তখন ভালোলাগায় মনটা ভরে যায়। হিজড়া শিশুদের নিয়ে নিউজ প্রকাশ হলে বড় এক সাংবাদিক ভাইয়া যখন আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘শাকিল তোমার হিজড়া শিশুর নিউজটা অনেক সুন্দর হয়েছে। কীভাবে করলে আমার এই ধরণের নিউজ তো মাথাই ছিল না।’ তখন হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল।

শাকিল সব সময় ভাবেন এমন নিউজ করবেন যেটা কখনো কোনো মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়নি। তিনি বলেন, আমি যখন হিজড়া শিশুর নিউজ করি তখন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রথমে বিডিনিউজের আইডি কার্ড দেখিয়েও কোনো হিজড়া বা হিজড়া শিশু আমার সাথে কথা বলতে রাজি হননি। কয়েক দিন ঘুরে নানা কৌশলে তাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিয়ে একটা বিশেষ প্রতিবেদন করি। এছাড়াও ‘ভিক্ষেনির্ভর মুক্তিযোদ্ধার জীবন’ প্রতিবেদনটিও বেশ আলোচনায় আসে।

শিশুসাংবাদিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নিউজ করতে পারা আমার জীবনের বড় পাওয়া - বললেন শাকিল। তিনি বলেন, আমার অনেক ইচ্ছা ছিল প্রধানমন্ত্রীর নিউজ করব। তবে কখনো ভাবিনি শিশুসাংবাদিক হিসাবে নিউজ করতে পারবো।

বিডিনিউজ২৪ডটকমে হ্যালো ও প্রিজমে সাংবাদিকদের সাথে কাজ করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে শাকিল বলেন, আমাদের সবাই অনেক আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ। আমাদের মধ্যে একটা অদৃশ্য আত্মার বন্ধ রয়েছে। আরিয়ান, হৃদয়, সাদিক ইভান, সজিবুল হাসান, সুমন ভাইয়া, পৃথা, নানজীবা আপু, ছোট ভাই সাকির, আলাউদ্দিনসহ অনেকেই আমরা বিডিনিউজে একসাথে কাজ করছি। আমরা কাজকে অনেক এনজয় করি।

শাকিল বলেন, জীবনে পথচলা বড়ই কঠিন। অনেক বাধা পেরিয়ে পথ চলছি। তবে সাংবাদিকতার সুবাদে সরকারি-বেসরকারি অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথেই পরিচয় হয়েছে, আন্তরিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। শুরুতে ফোনে কথা বলতে ভয় পেতাম, এখন আর কোনো সমস্যা হয়। এখন স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও কোনো শিশুদের প্রোগ্রাম হলেই আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

একজন ভালো মানুষ হতে চান শাকিল। সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা করে ভালো সাংবাদিক হয়ে দেশের মানুষের জন্য ও শিশুদের জন্য কিছু করতে চান। শাকিলের ভাষায়, আমার অনেক ইচ্ছা পড়াশুনা শেষ করে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে শিশুদের সমস্যা নিয়ে নিউজ সংগ্রহ করব। সংবাদ করার মধ্য দিয়েই অগণিত পাঠকের ভালোবাসা পেতে চাই। দেশকাঁপানো সংবাদ করে সেরা সাংবাদিক হতে চাই।

image

আপনার মতামত দিন