মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশে চালু হচ্ছে স্টারলিংক: লরেন ড্রেয়ার

প্রকাশ: বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
চারদিনের সফরে বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি আর্থনা সামিটে যোগ দিয়েছেন। সামিটের ফাঁকে ফাঁকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সেক্টরের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার (২৩ এপ্রিল) কাতারের দোহার সামিটের মূল অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাইডলাইন মিটিংয়ে বসেছিলেন ভূ-উপগ্রহ ভত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক এর মূল কোম্পানি স্পেসএক্স-এর গ্লোবাল এনগেজমেন্ট বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক সচিব লামিয়া মোর্শেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

গণমাধ্যমকর্মীদের বৈঠকের বিষয় প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

জানাগেছে, বৈঠকে আগামী মে মাস নাগাদ বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু এবং এর সেবা মূল্য ডিজিটালি সম্পাদনে তাদেরই ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ফার্ম (পেপ্যাল)-এর সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে প্রকাশ, বৈঠকে লরেন ড্রেয়ার ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হবার আগে স্টারলিংক চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা শেষ সীমার খুব কাছাকাছি। আমি আমার দলকে মে মাসের মধ্যে একটি কারিগরি উৎক্ষেপণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে বলেছি। এ সহযোগিতার শুরু হবে একটি টেকনিক্যাল রোলআউটের মাধ্যমে, যার পরেই সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন শুরু হবে-কিছু চূড়ান্ত বিষয় নিষ্পত্তির পর।

উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য বড় খবর। মানুষ দিন গুনছে এবং যখন সময় আসবে, তখন একটি বড় উদযাপন হতে হবে।

লরেন ড্রেয়ার বলেন, এটি আমাদের সবচেয়ে সুবিন্যস্ত এবং সুসংগঠিত উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি।

এর আগে রাজধানীর ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট প্রাঙ্গণে ৯ এপ্রিল ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের ইন্টারনেটের পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী হয়। সামিটে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) স্টলে বিশেষ কিউআর কোড ব্যবহার করে দর্শনার্থীরা বিনা মূল্যে স্যাটেলাইট-চালিত ইন্টারনেট প্রযুক্তির গতি পরীক্ষার সুযোগ পান।

তারও আগে গত ২৯ মার্চ স্টারলিংক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে বিনিয়োগ নিবন্ধনের অনুমোদন পায়। স্টারলিংককে কার্যক্রম শুরু করার জন্য ৯০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। এই সময়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু করতে স্থানীয় অংশীদার খোঁজের পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে।

বিটিআরসির অনুমোদন পেলে গত ২৫ মার্চ প্রণীত নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স পাওয়া প্রথম প্রতিষ্ঠান হবে স্টারলিংক।

এ নিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী জানান, প্রায় অর্ধডজন বৈশ্বিক স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সেবা দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল স্টারলিংকই আবেদন করেছে।

এনজিএসও লাইসেন্সের পাশাপাশি স্টারলিংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট স্যাটেলাইট সেবা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম ব্যবহারের অনুমতি নিতে একটি আলাদা রেডিও কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি লাইসেন্সও নিতে হবে।

বিটিআরসি সূত্র জানায়, নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের লাইসেন্সের আওতায় আবেদন ও প্রক্রিয়াকরণ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। লাইসেন্স ফি ১০ হাজার ডলার এবং বার্ষিক ফি ৩০ হাজার ডলার। এ ছাড়া প্রতিটি টার্মিনালের জন্য বার্ষিক স্টেশন বা টার্মিনাল ফি হিসেবে এক ডলার করে আদায় করা হবে। তবে শুধুমাত্র আইওটি সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত টার্মিনালের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না।

যদি কোনো লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের গেটওয়ে ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের জন্য সরকারের মালিকানাধীন ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) সঙ্গে সংযুক্ত থাকে অথবা কোনো বাংলাদেশি স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্ব বা উদ্যোগ গড়ে তোলে তাহলে আবেদন, প্রক্রিয়াকরণ, লাইসেন্স গ্রহণ ও বার্ষিক ফি থেকে ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।

লাইসেন্সধারীদের প্রথম দুই বছর কোনো আয় ভাগাভাগির বাধ্যবাধকতা থাকছে না। তবে তৃতীয় থেকে পঞ্চম বছর পর্যন্ত মোট আয়ের তিন শতাংশ এবং ষষ্ঠ বছর থেকে আয়ের সাড়ে পাঁচ শতাংশ সরকারকে দিতে হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার ভুটানে স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট-সেবা নিতে পারছেন গ্রাহকেরা। ভুটানে রেসিডেনশিয়াল ফিক্সড ইন্টারনেটের জন্য খরচ পড়ে প্রতি মাসে ৪ হাজার ২০০ ভুটানিজ গুলট্রাম, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫ হাজার ৮০০ টাকার মতো।

আপনার মতামত দিন