প্রযুক্তি দুনিয়া এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ঘিরে যেন এক অভূতপূর্ব উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এই উত্তেজনাকেই এআই বুদ্বুদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা ১৯৯০ দশকের শেষ দিকের ডটকম বুম বা বুদ্বুদের সময়কার মতোই, যখন বিনিয়োগকারীরা ইন্টারনেটভিত্তিক কোম্পানিগুলোর প্রতি অন্ধ আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন, যার ফল ছিল ধ্বংসাত্মক।
সর্বত্র এআই: প্রযুক্তির নতুন যুগ নাকি অস্থিরতার সূচনা?
আজকের দিনে এআই এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে প্রতিটি প্রযুক্তি পণ্য বা সেবার মধ্যেই কোনো না কোনোভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত হচ্ছে। মেসেজিং অ্যাপ, ওয়েব ব্রাউজার, অনুবাদ সফটওয়্যার, এমনকি কোডিং টুলেও এখন এআই ব্যবহৃত হচ্ছে।
ওপেনএআই, পারপ্লেক্সিটি ও অ্যানথ্রোপিক-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তাদের প্ল্যাটফর্মগুলো দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে, এবং সেইসঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও শত শত কোটি ডলার ঢালছেন এসব কোম্পানিতে।
তবে বিল গেটস মনে করেন, এই বিনিয়োগের উন্মাদনা পুরো খাতটিকেই একটি বিপজ্জনক বুদ্বুদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যেখানে প্রত্যেকে দ্রুত লাভের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ বাজি ধরছে, কিন্তু সবাই শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে না।
ডটকম বুদ্বুদের পুনরাবৃত্তি?
বিল গেটস বলেন, “আমরা বর্তমানে একটি এআই বুদ্বুদের মধ্যে রয়েছি। এটি কোনো কল্পনা নয়। পরিস্থিতি অনেকটা ১৯৯০ দশকের শেষ দিকের মতো, যখন ডটকম বুমের ফলে বহু ইন্টারনেটভিত্তিক কোম্পানিকে অতিমূল্যায়ন করা হয়েছিল।”
তখন অসংখ্য নতুন কোম্পানি ইন্টারনেট বিপ্লবের ঢেউয়ে ভেসে উঠে আসে। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেছিলেন, প্রতিটি ওয়েবভিত্তিক ব্যবসাই একদিন মুনাফার পাহাড় গড়বে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ২০০০ সালে ডটকম ধস নেমে আসে, এবং শত শত কোম্পানি অল্প সময়েই দেউলিয়া হয়ে যায়।
গেটসের আশঙ্কা, বর্তমান এআই খাতেও একই ধরনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। যদিও কিছু প্রতিষ্ঠান-যেমন, ওপেনএআই, গুগল, মাইক্রোসফট বা অ্যানথ্রোপিক-দীর্ঘমেয়াদে সফল হবে, কিন্তু অসংখ্য স্টার্টআপ হয়তো টিকতে পারবে না।
শীর্ষ উদ্যোক্তাদের একই সুর
বিল গেটসের মতো একই সতর্কতা দিয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন প্রযুক্তি নেতা। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান ইতিমধ্যেই বলেছেন, “এআই ভবিষ্যতে একটি বুদ্বুদে পরিণত হতে পারে।”
তাঁর মতে, বিনিয়োগকারীরা এআই নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী ও উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন, যা একটি বাস্তব ঝুঁকি তৈরি করছে।
অন্যদিকে, মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গও এ বছরের শুরুতে মন্তব্য করেছিলেন যে, এআই শিল্পও হয়তো ডটকম যুগের মতো একটি ফাটলের মুখে পড়তে পারে-যেখানে অতিরিক্ত প্রত্যাশা ও সীমিত বাস্তবতা একসময় মুখোমুখি সংঘর্ষে আসে।
বিশ্লেষণ: আগামীর পথ কোন দিকে?
এআই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে মানব ইতিহাসের অন্যতম বড় উদ্ভাবন, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা, গবেষণা ও বিনোদন-সবখানেই গভীর প্রভাব ফেলছে। তবে অতিমূল্যায়ন, অনিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ ও অবাস্তব প্রত্যাশা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে এই এআই বুম-ই হতে পারে আগামী দিনের এআই ধস।
বিল গেটসের মন্তব্য তাই শুধু সতর্কবার্তা নয়-এটি বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিবিদদের জন্য এক গভীর আত্মসমালোচনার আহ্বান: উন্নতি ও উদ্ভাবনের দৌড়ে যেন বাস্তবতা ও স্থিতিশীলতা হারিয়ে না যায়। সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে