এআই-চালিত আইন প্রণয়ন করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
নতুন আইন প্রণয়ন এবং পুরাতন আইন পর্যালোচনা ও সংশোধনের কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই উদ্যোগকে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এ বাবদ কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেছে উপসাগরীয় দেশটি।

 ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউএই-এর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এই প্রকল্পকে ‘এআই-চালিত আইন প্রণয়ন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সরকারি কাজকে সহজতর করার জন্য অনেক দেশ নথি সংক্ষেপ, সেবা উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করলেও, আইন প্রণয়নের মতো গঠনমূলক কাজে সরাসরি এআই ব্যবহার প্রথমবারের মতো এমন গুরুত্ব পাচ্ছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এ নতুন আইন প্রণয়ন আমাদের আইন তৈরির প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও আরো সুনির্দিষ্ট করে তুলবে।”

তিনি আরও জানান, সরকার আশা করছে, এআই ব্যবহারের ফলে আইন তৈরির সময় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে।

‘রেগুলেটর ইন্টেলিজেন্স অফিস’ গঠনের সিদ্ধান্ত
গত সপ্তাহে ইউএই মন্ত্রিসভা একটি বিশেষ সংস্থা ‘রেগুলেটর ইন্টেলিজেন্স অফিস’ গঠনের অনুমোদন দিয়েছে, যা এআই-ভিত্তিক আইন প্রণয়ন কার্যক্রমের সার্বিক তদারকি করবে। এই অফিস হবে পুরো প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে এবং আইন প্রণয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে এআই-র ভূমিকা নির্ধারণ ও পরিচালনা করবে।

এআই সহ-আইনপ্রণেতা?

কোপেনহেগেন বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক রনি মেডাগলিয়া এই উদ্যোগকে এক ‘সাহসী ও ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে,     “আমিরাতের এই উদ্যোগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সহ-আইনপ্রণেতা হিসেবে রূপান্তরের উচ্চাভিলাষ নিহিত আছে।”

বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো কোনো রাষ্ট্র আইনের খসড়া তৈরি এবং আইনের সংস্কারে এআইয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে যাচ্ছে।

তথ্যভাণ্ডার নির্মাণ এবং বিশ্লেষণ
আইনের প্রভাব ও কার্যকারিতা বিশ্লেষণের জন্য সরকার একটি বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার গঠনের উদ্যোগও নিয়েছে। এই তথ্যভাণ্ডারে থাকবে ফেডারেল ও স্থানীয় আইন, আদালতের রায়, সরকারি পরিষেবা এবং নাগরিক মতামতের ডেটা। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে এআই নিয়মিতভাবে আইন সংশোধন ও হালনাগাদের পরামর্শ দেবে।

বিশাল বিনিয়োগ ও নজরদারি ব্যবস্থা
আমিরাত ইতোমধ্যেই এআই খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। ২০২৪ সালে আবুধাবিতে এমজিএক্স নামের একটি বিনিয়োগ সংস্থা চালু হয়, যা ব্ল্যাকরকের এআই অবকাঠামোসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এমনকি সংস্থাটির বোর্ডে একজন এআই পর্যবেক্ষক নিয়োগও দেওয়া হয়েছে, যিনি পুরো উদ্যোগের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করবেন।

সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ একসাথে

যদিও এই প্রকল্পকে অনেকেই ভবিষ্যতের পথ দেখানো এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন, তবে বিশেষজ্ঞরা কিছু সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেছেন। তাদের মতে,

    >>প্রশিক্ষণ ডেটায় পক্ষপাত থাকতে পারে

    >>ব্যাখ্যার স্বচ্ছতা না থাকায় জনসাধারণের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে

    >>এআই অনির্ভরযোগ্য বা ভুল তথ্যও দিতে পারে

তারা বলছেন, নীতিগত স্বচ্ছতা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যথাযথ তদারকি ছাড়া এই উদ্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
 
আইন প্রণয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বিতর্কিত হলেও, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রযুক্তিকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা হিসেবে গ্রহণ করে পথ দেখাচ্ছে। সময়ই বলে দেবে, এআই আইনপ্রণেতা হিসেবে কতটা কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সূত্র: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

আপনার মতামত দিন