ইতালির অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তের মুখে মেটা

প্রকাশ: বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন প্রযুক্তি দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। মেটা, গুগল, অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অ্যাপে এআই ফিচার যুক্ত করে গ্রাহক সেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। তবে এ উদ্ভাবনের পথে দেখা দিচ্ছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এ ধরনের ফিচার কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে।

সম্প্রতি এমনই একটি প্রশ্নের মুখে পড়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। ইতালির অ্যান্টিট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

 তদন্তের কারণ: এআই ফিচার যুক্ত করা কি প্রতিযোগিতার জন্য হুমকি?
ইতালির প্রতিযোগিতা ও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা Autorità Garante della Concorrenza e del Mercato (AGCM) অভিযোগ করেছে, মেটা ব্যবহারকারীদের স্পষ্ট সম্মতি না নিয়েই হোয়াটসঅ্যাপে একটি এআই চ্যাটবট বা সহকারী যুক্ত করেছে।

এই পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা নীতিমালার পরিপন্থী কি না, তা নিয়েই মূলত তদন্ত চলছে।

সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী, এতে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হতে পারে।

 কী বলছে মেটা?
মেটা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র ইমেইলে জানান, “হোয়াটসঅ্যাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ফিচার বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারার ফলে কোটি কোটি ইতালীয় এমন একটি অ্যাপে এআই সুবিধা পাচ্ছেন, যা তারা ইতিমধ্যেই চেনেন, বিশ্বাস করেন এবং ব্যবহার করতে জানেন।”

মেটা জানিয়েছে, তারা রোমভিত্তিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করছে এবং এআই সহকারী ব্যবহারকারীদের উপকারেই তৈরি করা হয়েছে।

 কোথায় কোথায় যুক্ত করা হয়েছে মেটার এআই?
তদন্তে উঠে এসেছে, ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে হোয়াটসঅ্যাপের ইন্টারফেসে ‘মেটা এআই’ যুক্ত করা হয়েছে এবং এটি ব্যবহারকারীর সার্চ বারের সঙ্গেই যুক্ত। এর ফলে অ্যাপের সাধারণ ফিচারের সঙ্গে এআই চ্যাটবট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তবে প্রশ্ন উঠছে-এই যুক্তিকরণ কি ব্যবহারকারীর ইচ্ছায় হয়েছে, নাকি এটি প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশল?

‘বাধ্যতামূলক’ পরিষেবা কি বাজারকে বাঁকা করছে?
ইতালির AGCM মনে করছে, মেটা তাদের হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির কোটি কোটি ব্যবহারকারীকে কাজে লাগিয়ে দুটি ভিন্ন পরিষেবাকে একীভূত করেছে, যা ব্যবহারকারীদের বিকল্প বেছে নেওয়ার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে করে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব এআই সেবা প্রচারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে, কারণ তারা হোয়াটসঅ্যাপের মতো শক্তিশালী মাধ্যম ব্যবহার করতে পারছে না। মেটা এখানে গুণগত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয়, বরং নিজেদের আধিপত্যপূর্ণ অবস্থান কাজে লাগিয়ে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

 ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা আইন কী বলছে?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা নীতিমালা অনুযায়ী- কোনো কোম্পানি যদি বাজারে নিজের প্রভাবশালী অবস্থান অপব্যবহার করে, তবে সেটি আইন লঙ্ঘনের শামিল। এই ধরনের লঙ্ঘনের জন্য বিশ্বব্যাপী মোট বার্ষিক আয়ের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে। অতীতে গুগল, অ্যাপলসহ বহু প্রতিষ্ঠানই এমন তদন্তের মুখে পড়েছে এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, মেটার ক্ষেত্রেও কি এমন কিছু হতে যাচ্ছে?

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী দৌড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নতুন এক দ্বার খুলেছে নিঃসন্দেহে। তবে সেই দৌড়ে বাজারের প্রতিযোগিতা ও ব্যবহারকারীর অধিকার যেন পেছনে পড়ে না যায়, তা নিশ্চিত করাও জরুরি। ইতালির এই তদন্ত ইউরোপজুড়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে-যেখানে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আরও কঠোর নজরদারি নিশ্চিত হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং নীতিগত এবং নৈতিক প্রশ্নেও গড়ছে নতুন বিতর্ক। সূত্র: রয়টার্স,ইউরোনিউজ

image

আপনার মতামত দিন