ভারত সরকারের আরোপিত ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মণিপুরের বিদ্রোহীরা ইলন মাস্কের স্টারলিংক সেবা ব্যবহার করছে। পুলিশ এবং দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্টারলিংক বিদ্রোহীদের যোগাযোগের একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভারতে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তবে প্রতিবেশী মিয়ানমারে এই পরিষেবা বৈধ এবং অনুমোদিত। এটি মণিপুরে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে এর ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে বর্তমানে মণিপুরি রাজ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ জন্য একাধিকবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে সেই অঞ্চলে। ২০২৩ সালে মে মাসে থেকে প্রায় দৈনিক সংঘর্ষ হচ্ছে রাজ্যটিতে, যার ফলে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। উভয় পক্ষেই সশস্ত্র গোষ্ঠী গঠন হয়েছে, যার ফলে রাজ্যটি জাতিগতভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার ইন্টারনেট বন্ধ রাখলেও বিভিন্ন এলাকায় স্টারলিংক সেবা ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান একাধিক সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
মণিপুরের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নামের মেইতেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এক নেতা জানান, তাঁদের গোষ্ঠী প্রথমে মিয়ানমারের স্টারলিংক সেবা ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে তাঁরা বুঝতে পারেন যে এটি মণিপুরের সীমান্তেও কাজ করে।
ইলন মাস্ক ভারতে স্টারলিংক সেবা চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও দেশটির কঠোর টেলিযোগাযোগ নীতির কারণে সেবা চালুর জন্য নিরাপত্তা অনুমোদনের প্রক্রিয়া এখনো চলমান। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এটি নিরাপত্তার জন্য হুমকি বা ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা অতিক্রমের হাতিয়ার হতে পারে।
ভারতীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের একটি নিয়মিত রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে-ইন্টারনেট শাটডাউন। গত সাত বছরে ভারত সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
রাজ্যের দুটি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন, মণিপুরের সাধারণ জনগণ এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী অবৈধভাবে ইন্টারনেট অ্যাকসেস করতে স্টারলিংক ডিভাইস ব্যবহার করছে।
মণিপুরের মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন কিছু এলাকায় স্টারলিংক ডিভাইসের কার্যক্রম শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা। উদ্ধার হওয়া ডিভাইসটি মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে স্টারলিংক কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, তিনি একটি স্টারলিংক ডিভাইসটি ব্যবহার করতে দেখেছেন। এটি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল।
মণিপুরে কতগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠী এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তার কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। কুকি পক্ষের দুটি এবং মেইতেই পক্ষের এক গোষ্ঠী দাবি করেছে, তারা ইন্টারনেট অ্যাকসেস করতে স্টারলিংক ব্যবহার করেনি।
এর আগেও ভারতের ভূখণ্ডে স্টারলিংক ব্যবহার দেখা গেছে। গত ডিসেম্বর মাস, ভারতীয় কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, তারা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি নৌকায় স্টারলিংক ডিভাইস উদ্ধার করেছে, যা প্রায় তিন বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের মাদকদ্রব্য (মেথঅ্যাম্পিটামিন) পাচারের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, ডিভাইসটি নেভিগেশন এবং ইন্টারনেট অ্যাকসেসের জন্য ভারতীয় জলসীমায় ব্যবহার করা হচ্ছিল এবং তারা তদন্তে সহায়তার জন্য স্টারলিংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সূত্র: নিউজবাইটস ও দ্য গার্ডিয়ান