জুলাই মাসের শেষ নাগাদ নতুন মুদ্রানীতি প্রকাশ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সম্প্রসারিত করার দিকটি গুরুত্ব পাবে। নতুন মুদ্রানীতিতেও সংকোচনমূলক অবস্থান থেকে সরছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যদিও ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বিনিয়োগ বাড়াতে সংকোচনমূলক অবস্থান থেকে বের হতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নমনীয় মুদ্রানীতির কথা বলছেন তারা।
গত বছরের যে ছাত্র আন্দোলন পরিচিত পেয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলন হিসাবে, এর নেপথ্যে ছিল অর্থনৈতিক সংকট। টানা তিন বছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে উৎপাদন খাতে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তেমনই কর্মসংস্থানের হার হ্রাস পেয়েছে। জুলাই এর শেষ সপ্তাহে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি, উন্নয়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বাজারে কি পরিমাণ অর্থের সরবরাহ থাকবে, তা নির্ধারিত হয় মুদ্রানীতির মাধ্যমে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের কৌশল প্রণয়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার সুফল হিসেবে ২৭ মাস পর মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের প্রত্যশা, দেশে ফিরবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কাটবে বিনিয়োগের খরা। একইসঙ্গে ঋণের সুদ হার কমিয়ে বিনিয়োগ বান্ধব মুদ্রানীতি চান তারা।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটা সংকোচন মুদ্রানীতিতে ছিলাম আমরা। এজন্য আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট গ্রোথ ইতিহাসের সবচেয়ে কম ছিলো। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার৷ কারণ আমাদের এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশনের দিকে যেতেই হবে।’
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি থেকে বের হতে হবে। মূল্যস্ফীতি শুধু অর্থের যোগানে হয় না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেই সাথে নমনীয় মুদ্রানীতি কথা বলছেন তারা।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘উচ্চ সুদের কারণে উৎপাদন খরচ বেশি। উৎপাদন খরচ বেশি হলে যারা উৎপাদন করেন তারা কম দামে জিনিস বিক্রি করবেন না। মূল্যস্ফীতি কমানোটা একটা টার্গেট কিন্তু সাপ্লাই চেইন ডেভেলপ করতে না পারলে কোন লাভ হবে না। এখন আমাদের একটু নমনীয় মুদ্রানীতি প্রয়োজন।’
ঋণের মাধ্যমে অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে বা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। লক্ষ্য থাকে, কর্মসংস্থানের জোগান দিয়ে সরকার নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করা। এবারও মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সংকোচনমূলক নীতি থেকে বের হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি খাদ্য বহির্ভূত খাতে না কমানোর কারণে এটা এখনো ৮ এর উপরে রয়েছে। যেহেতু ৮ এর উপরে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক টার্গেট অনুযায়ী কমাতে সক্ষম হয়নি সেক্ষেত্রে আমরা পলিসি রেট আপাতত কমাবো না। এবং একইসাথে উদার মুদ্রানীতি ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত আমি দেখছি না।’
জুনে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে, যা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সূত্র: এখন