বিশ্ব বাণিজ্যে আবারও উত্তেজনার সঞ্চার ঘটিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলমান আলোচনা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে হঠাৎ করেই তিনি বাংলাদেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন-যদিও তা এখনই কার্যকর হচ্ছে না।
শুরুটা কীভাবে?
হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, আমদানি পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বঘোষিত কিছু ‘আক্রমণাত্মক’ কর বা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্প আবারও সরব হয়েছেন-নতুন করে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়ে।
চিঠি গেছে ১৪ দেশের নেতার কাছে
সোমবার ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়াতে ১৪টি দেশের নেতাদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠি প্রকাশ করেন। এই চিঠিগুলোর মাধ্যমে তিনি জানিয়ে দেন,
>>শুল্ক আরোপ সম্পর্কের ভিত্তিতে বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে
>>প্রস্তাবিত শুল্ক হারগুলো এপ্রিলের ঘোষণার অনুরূপ
>>আগামী ১ আগস্ট থেকে এসব শুল্ক কার্যকর হতে পারে
বাংলাদেশের ওপর প্রস্তাবিত শুল্ক কত?
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ৩৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে। এই তালিকায় আরও রয়েছে-
>>মিয়ানমার ও লাওস: ৪০%
>>থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া: ৩৬%
>>ইন্দোনেশিয়া: ৩২%
>>দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩০%
>>মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়া: ২৫%
ট্রাম্পের যুক্তি কী?
ট্রাম্প দাবি করছেন, এ ধরনের উচ্চ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে-
>>মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সুরক্ষা পাবে
>>দেশীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে
>>বিদেশি প্রতিযোগিতার চাপ কমবে
তাঁর ভাষায়, এটি "রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ", অর্থাৎ মার্কিন রপ্তানিকারকদের প্রতি করা "অবিচারের জবাব"।
অর্থনীতিবিদদের মতামত ভিন্ন
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপে-
>>যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়তে পারে
>>বৈশ্বিক বাণিজ্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
>>শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে; যেমন টয়োটার শেয়ারের দাম একদিনেই ৪% কমে গেছে।
চুক্তি ও আলোচনার অগ্রগতি
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-
>> যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি করেছে
>>চীনের সঙ্গেও আংশিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে
>>ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত
>>ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা চলছে, তবে এখনো শুল্ক-সংক্রান্ত কোনো চিঠি ইইউকে পাঠানো হয়নি
গাড়িশিল্প: আলোচনার প্রধান বাধা
বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা গাড়ির ওপর শুল্ক ঘিরেই জটিল হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন-যদি চুক্তি না হয়, তবে জাপানের ওপর ৩০-৩৫% এবং ইইউর ওপর ৫০% হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
ট্রাম্পের এই বহুমুখী শুল্কনীতি বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই এক ধরনের চাপ ও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এমন পদক্ষেপ রপ্তানি ও অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আলোচনার দরজা এখনো খোলা রয়েছে। সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই বাণিজ্য কূটনীতির মাধ্যমে কিছুটা ছাড় আদায় করা যেতে পারে-এমনই আশায় বুক বাঁধছে অনেক দেশ। সূত্র: বিবিসি