বৈশ্বিক এআই সহযোগিতায় চীনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ 

প্রকাশ: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি যেমন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, তেমনি জন্ম দিয়েছে গভীর ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ ও প্রতিযোগিতার। ঠিক এই সময়ে চীন এমন একটি প্রস্তাব সামনে এনেছে, যা বৈশ্বিক এআই নীতিমালা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

সম্প্রতি সাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কনফারেন্স ২০২৫-এ চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ঘোষণা দেন, বিশ্বব্যাপী এআই প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতা বাড়াতে একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের সময় এসেছে। এই সংস্থা হবে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা এআই প্রযুক্তিকে নির্দিষ্ট কিছু দেশের একচেটিয়া দখলের বাইরে এনে বিশ্বব্যাপী সবার জন্য সহজলভ্য করে তুলবে।

প্রযুক্তিতে একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে চীনের বার্তা
প্রধানমন্ত্রী লি সরাসরি কোনো দেশের নাম না বললেও তাঁর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এআই রপ্তানি নীতির প্রতি ইঙ্গিত ছিল। তিনি বলেন, কিছু দেশের সীমাবদ্ধতা ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এআই খাতে বৈশ্বিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র দেশগুলোতে মার্কিন এআই প্রযুক্তির প্রভাব বিস্তারে উদ্যোগ নিচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে চায়।

চীন এই পরিস্থিতিতে একটি ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে। তাদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হওয়া উচিত উন্মুক্ত, অংশীদারিত্বভিত্তিক ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য সহায়ক একটি প্রযুক্তি। তারা বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথ অঞ্চলের সঙ্গে নিজেদের অর্জন, অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি ভাগ করে নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক কাঠামোর প্রস্তাব এবং শাংহাইকে কেন্দ্র করে চিন্তা
লি কিয়াং তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, এখনো পর্যন্ত বৈশ্বিক এআই পরিচালনায় ঐক্যবদ্ধ নীতি কাঠামো গড়ে ওঠেনি। বিভিন্ন দেশের মধ্যে নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। এ বিভাজন দূর করতে একটি আন্তর্জাতিক ঐকমত্যভিত্তিক সংগঠন প্রয়োজন, যা নিয়ন্ত্রণ, নীতি এবং প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে।

এই প্রস্তাবিত সংস্থার প্রধান কার্যালয় শাংহাইয়ে স্থাপনের পরিকল্পনা করছে চীন। সম্মেলনের এক গোলটেবিল আলোচনায় চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওসু জানান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, জার্মানি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ৩০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা এই প্রস্তাবে অংশ নিয়েছেন।

‘গ্লোবাল এআই গভর্ন্যান্স অ্যাকশন প্ল্যান’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে ‘গ্লোবাল এআই গভর্ন্যান্স অ্যাকশন প্ল্যান’, যেখানে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, একটি ওপেন সোর্স কমিউনিটির মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত প্রযুক্তি বিনিময়ের কথাও বলা হয়েছে-যা এআইকে সবার নাগালের মধ্যে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ও চিন্তাবিদদের অংশগ্রহণ
তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেয় ৮০০টিরও বেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, প্রদর্শিত হয় প্রায় ৩ হাজার উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য, ৪০টি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল, ৫০টি এআইচালিত ডিভাইস এবং ৬০টি ইন্টেলিজেন্ট রোবট।

চীনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিল হুয়াওয়ে, আলিবাবা এবং রোবট নির্মাতা ইউনিট্রি। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সম্মেলনে অংশ নেয় টেসলা, অ্যালফাবেট (গুগলের মূল কোম্পানি) এবং অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠান। আলোচনায় অংশ নেন ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত অ্যান বুভারো, ‘গডফাদার অব এআই’ খ্যাত গবেষক জিওফ্রে হিন্টন এবং গুগলের সাবেক সিইও এরিক শ্মিট। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে, বিগত বছরগুলোর মতো এবার ইলন মাস্ক উপস্থিত ছিলেন না।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে চীনের এই উদ্যোগকে নিছক একটি কূটনৈতিক ঘোষণা হিসেবে দেখা যাবে না। বরং এটি হতে পারে বৈশ্বিক এআই শাসনের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা। উন্নয়নশীল দেশগুলো যদি এই উদ্যোগে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে, তবে প্রযুক্তি বিভাজনের বর্তমান চিত্র বদলে গিয়ে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য প্রযুক্তিনীতির পথ তৈরি হতে পারে। সূত্র: রয়টার্স

image

আপনার মতামত দিন