কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বা এআই এখন আর কেবল চ্যাটবট, সার্চ ইঞ্জিন বা ছবি বানানোর সীমায় আটকে নেই। এবার এই প্রযুক্তিই বদলে দিল এক দম্পতির জীবন। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে যাঁরা সন্তান ধারণের জন্য লড়াই করে এসেছেন, অবশেষে তাঁরা কোলে পেলেন ফুটফুটে সন্তান-আর এই অভাবনীয় ঘটনাকে সম্ভব করেছে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত এআই।
দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রার্থনার শেষ কোথায়?
প্রতিবারই ব্যর্থতা। স্বাভাবিকভাবে সন্তানধারণে বারবার চেষ্টার পর যখন কিছুতেই সুফল মিলছিল না, তখন আশ্রয় নেওয়া হয় আইভিএফ (In Vitro Fertilization) পদ্ধতির। তবে এখানেও হতাশার মুখোমুখি হতে হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন-এই দম্পতি কোনো দিনই সন্তানের মুখ দেখবেন না। কারণ, উভয়ের মধ্যেই রয়েছে বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যা।
বিশেষ করে পুরুষ সঙ্গীর ক্ষেত্রে দেখা যায় ‘অ্যাজোস্পার্মিয়া’-অর্থাৎ শুক্রাণুর উপস্থিতিই নেই। এমন অবস্থায় আইভিএফ কার্যকর হবে না বলেও মত দেন বিশেষজ্ঞরা। দাম্পত্য জীবনের প্রায় দুই দশক পার করে আসা এই দম্পতির চোখে তখন শুধুই অন্ধকার।
আলোর খোঁজে এআই
ঠিক তখনই নতুন করে আলো দেখায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক উন্নতিতে এআই এখন রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং এমনকি সার্জারিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে সফলভাবে। এবার সেই এআই ব্যবহৃত হলো আইভিএফ পদ্ধতিতে-আর তাতেই এল সাফল্য।
এআই কীভাবে সহায়তা করল?
এআই প্রযুক্তির সহায়তায় অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করা হয় পুরুষ ও নারীর শরীরবৃত্তীয় তথ্য। বিশেষ ধরনের অ্যালগরিদম ব্যবহার করে নির্ণয় করা হয়-সন্তানধারণের সম্ভাব্য পথ কোনটি হতে পারে। কোনো প্রকার কার্যকর শুক্রাণু আদৌ রয়েছে কি না, থাকলে কোনটিকে নির্বাচন করলে সাফল্যের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি-এই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেয় এআই।
এমনকি ভ্রূণ গঠনের সময় কোনটি সবচেয়ে সম্ভাবনাময়, কোন ভ্রূণ গর্ভে প্রতিস্থাপন করলে জন্মদানের সম্ভাবনা বেশি-তা-ও চিহ্নিত করতে সহায়তা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। শেষ পর্যন্ত এই প্রযুক্তির সহায়তায় গঠিত একটি সুস্থ ভ্রূণ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় নারীর গর্ভে। সময়মতো জন্ম নেয় সুস্থ একটি শিশু।
আইভিএফ: আশার এক নাম
যারা স্বাভাবিকভাবে সন্তানধারণে সক্ষম নন, তাঁদের জন্য আইভিএফ বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন এক বড় ভরসার নাম। ‘ইন ভিট্রো’ মানে শরীরের বাইরে। এ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর নিষেক শরীরের বাইরে ঘটিয়ে, ভ্রূণ গঠন করা হয়। পরে তা গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এটি সফল হলেও, কিছু জটিল ক্ষেত্রে সাফল্যের হার কম থাকে। তবে এবার এআই সেই সীমাবদ্ধতাও কাটিয়ে দিল।
এআই-চিকিৎসা বিজ্ঞান: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এআই এখন শুধু রোগ শনাক্তের নয়, বরং চিকিৎসা পরিকল্পনা, ওষুধ আবিষ্কার, রোবোটিক সার্জারি এমনকি জটিল প্রজনন চিকিৎসাতেও এক অনন্য ভূমিকা রাখছে। এই দম্পতির ঘটনা কেবল একটি গল্প নয়, বরং ভবিষ্যতের চিকিৎসাব্যবস্থার এক বাস্তব উদাহরণ।
প্রযুক্তি মানুষের শত্রু নয়-যদি সঠিকভাবে, মানবিকভাবে ও সঠিক প্রয়োগে তা ব্যবহৃত হয়। আজ যে মা হতে পারেননি, কাল তাঁর জীবনে এআই-ই এনে দিতে পারে সন্তানের মুখ। শুধু প্রয়োজন বিশ্বাস আর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সূত্র: আনন্দবাজার।