সরকার জমি দিলে শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দেবে পোশাক খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। পর্যায়ক্রমে হাসপাতাল, স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ জন্য গাজীপুর ও আশুলিয়ায় পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় জমি চেয়েছেন বিজিএমইএর নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে গতকাল বুধবার এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে বিজিএমইএ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি মিজানুর রহমান, শিহাব উদ্দৌজা চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ড. মোস্তফা আবিদ খান প্রমুখ।
বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা মুন্সীগঞ্জে বন্ধ হয়ে যাওয়া পোশাকপল্লি স্থাপন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলোর জন্য একটি সমন্বিত শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে জমি বরাদ্দ চান। পোশাক শিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জ, ব্যাংক ও এনবিআর-সংক্রান্ত সেবা জটিলতা, শিল্পে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য করণীয়, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা উন্নয়ন, রাজউক কর্তৃক ড্যাপের আওতায় ইতোপূর্বে নির্মিত কারখানাগুলোর হয়রানি শিকার হওয়ার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৯ মাস থেকে কমিয়ে ৩ মাস করা হয়েছে। অনেক সময় আর্থিক কারণে উদ্যোক্তা এ সময়ের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন না। ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৬ মাসে উন্নীত করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। এতে অন্তত ৬০০ পোশাক কারখানা ক্ল্যাসিফায়েড ঋণ থেকে রক্ষা পাবে।
নগদ সহায়তা প্রসঙ্গে মাহমুদ হাসান খান বলেন, এ হার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক ও সময়োপযোগী নয়। শিল্প ও দেশের স্বার্থে নগদ সহায়তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তিনি। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ১ শতাংশ হারে কর্তন করা উৎসে করকে বছর শেষে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে নিষ্পত্তি করার অনুরোধ জানান তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাকশিল্পের রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে কাস্টমস সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলোর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং এ-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়; ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোতেও অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব হয়। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে লিড টাইম কমিয়ে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে কাস্টমস প্রক্রিয়াগুলোকে সহজীকরণ, দ্রুততর ও হয়রানিমুক্ত করা অপরিহার্য। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও বিজিএমইএ নেতারা অনুরোধ জানান। তীব্র গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানাগুলোতে।
বৈঠকে বিজিএমইএ প্রতিনিধি দল জানায়, পোশাকশিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার অপরিহার্য। তারা প্রস্তাবনা দেন, পিপিপি ভিত্তিতে সরকারের খাস জমি এবং খাল-বিলগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে স্থাপন করা হলে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হবে।
আলোচনায় ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকার পোশাক শিল্প সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত আছে। উদ্যোক্তাদের সব অনুরোধ সরকারের নজরে আনা হবে। শিল্পকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা দেওয়া হবে।