দুনিয়ার সবচেয়ে গভীর কয়েকটি গিরিখাত

প্রকাশ: বুধবার, ০৯ এপ্রিল, ২০২৫
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
ভূমিতে বড় এবং গভীর ফাটল বা ভি আকৃতির গভীর উপত্যকাকে ক্যানিয়ন বা গিরিখাত বলে। বেশির ভাগ গিরিখাত তৈরি হয় নদীর প্রবাহ থেকে ভূমি ক্ষয় হওয়ার মাধ্যমে। বহু বছর ধরে নদীর প্রবাহে তার তলদেশ থেকে মাটি ও পাথর সরে যায়, ফলে নদীর তলদেশ ক্ষয়ে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়।

ভূমিকম্পের কারণে ভূ-উপরিভাগে ফাটল সৃষ্টির মাধ্যমেও কয়েকটি গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছে। গিরিখাত বিভিন্ন ধরনের হয়। বিশ্বের সবচেয়ে গভীর কয়েকটি গিরিখাত নিয়ে আজকের আয়োজন।

তারা রিভার গিরিখাত
ইউরোপের সবচেয়ে গভীর গিরিখাত তারা রিভার গিরিখাত। ৫১ মাইল লম্বা এই গিরিখাতটি মন্টেনেগ্রোর বিস্ট্রিকা থেকে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার হুম গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এই গিরিখাতে ৮০টির বেশি বিশালাকৃতির গুহা, বালুময় সৈকত, উঁচু খাঁড়া পাহাড় এবং পাথুরে ও নুড়িপাথরের সোপান রয়েছে। ডারমিটর জাতীয় উদ্যানের ভেতরে পাথুরে লিউবিশনিয়াহ পার্বত্যাঞ্চল তারা রিভার গিরিখাতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ। এই গিরিখাতের সবচেয়ে গভীর অংশ ৪ হাজার ২৬০ ফুট গভীর।

ইয়ারলাং সাংপো গ্র্যান্ড গিরিখাত
ইয়ারলাং সাংপো গ্র্যান্ড গিরিখাত চীনের তিব্বত অঞ্চলে অবস্থিত। এটি ব্রহ্মপুত্র গিরিখাত নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে গভীর গিরিখাত। এই গিরিখাতের গভীরতা সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৭১৪ ফুট এবং এটির দৈর্ঘ্য ৩১৩ মাইলের বেশি। ইয়ারলাং সাংপো নদীর উৎপত্তিস্থল কৈলাস পর্বতের কাছে। সেখান থেকে এই নদী পূর্ব দিকে প্রায় ১ হাজার ১০০ মাইল বয়ে গেছে এবং তিব্বতের পেই গ্রামের কাছে গিরিখাতে প্রবেশ করার আগে হিমালয়ের উত্তর অংশে প্রবাহিত হয়েছে।

টাইগার ল্যাপিং গিরিখাত
চীনের ইউনান প্রদেশের লিজিয়াং সিটির কাছ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মনোমুগ্ধকর টাইগার ল্যাপিং গিরিখাত। এই গিরিখাতের ভেতর দিয়ে জিনশা নদী প্রবাহিত হয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ইউনানের সুরক্ষিত অঞ্চল দিয়ে যে তিনটি নদী সমান্তরালভাবে বয়ে গেছে, জিনশা তার একটি। জ্যাড ড্রাগন বরফ পর্বত এবং হাবা বরফ পর্বতের মধ্যে এই গিরিখাতটি ১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত। আদিবাসী নাখি জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বসবাস করেন। অঞ্চলটি পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।

কালি গণ্ডকি গিরিখাত
বিশ্বের দ্বিতীয় গভীরতম গিরিখাত কালি গণ্ডকি। নেপালে হিমালয়ের যে অংশ দিয়ে কালি গণ্ডকি নদী প্রবাহিত হচ্ছে, সেখানে এই গিরিখাত তৈরি হয়েছে। কালি গণ্ডকি নদীর উৎপত্তি নুবাইন হিমাল হিমবাহ থেকে। সেখান থেকে নদীটি দক্ষিণ দিকে চলে যায় এবং একটি খাঁড়া-পার্শ্বযুক্ত গভীর গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ওই গিরিখাত পশ্চিমে ২৯ হাজার ৭৯৫ ফুট উঁচু ধৌলাগিরি এবং পূর্বে ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উঁচু অন্নপূর্ণা-১–কে পৃথক করেছে। কালি গণ্ডকি গিরিখাত ১৮ হাজার ২৭৮ ফুট গভীর।

সিন্ধু নদী গিরিখাত

সিন্ধু নদী পাকিস্তানের পাঞ্জাব সমভূমির দিকে প্রবাহিত হওয়ার আগে নাঙ্গা পর্বত শৃঙ্গের (হিমালয়ের পশ্চিম অংশ) চারপাশে বাঁক নেওয়ার সময় একটি বড় গিরিখাত তৈরি করেছে। নাঙ্গা পর্বতের কাছে এই গিরিখাতের গভীরতা প্রায় ১৪ হাজার ৮০০ ফুট থেকে ১৭ হাজার ১০০ ফুট পর্যন্ত। গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, সিন্ধু নদী চলার পথে অন্য জলধারার সঙ্গে মিশে যাওয়ায় এবং দিক পরিবর্তন করার ফলে এর তলদেশে যে ব্যাপক ক্ষয় হয়েছে, তাতে ওই অঞ্চলের মধ্যম ও নিম্ন ভূত্বকীয় শিলার স্তরগুলি উন্মুক্ত হয়ে গেছে।

কপার গিরিখাত
ছয়টি আলাদা আলাদা গিরিখাতকে একবারে কপার গিরিখাত বলা হয়। এগুলো মেক্সিকোর উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। ছয়টি নদীর প্রবাহ থেকে এই ছয় গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছে। নদীগুলো সিয়েরা তারাউমারার পশ্চিম অংশ দিয়ে বয়ে গেছে। পরে সব নদী ফুয়েরতে নদীতে মিলিত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরে গিয়ে মিশেছে। পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে, সাইকেল নিয়ে এবং গাড়ি চালিয়ে কপার গিরিখাত ঘুরে বেড়ানো যায়। ট্রেনে চড়েও আপনি এই গিরিখাত ঘুরে দেখতে পারবেন।

কোলকা গিরিখাত

কোলকা নদী থেকে কোলকা গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছে। এটি পেরুর দক্ষিণের আরেকিপা নগর থেকে ৯৯ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। আন্দিজ পর্বতমালার কোলকা ভ্যালিতে অবস্থিত এই গিরিখাতটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৩ মাইল। বিশ্বাস করা হয়, পেরুর দুটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির কারণে ভূমির উচ্চ কম্পন এই গিরিখাত তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। এটি ১১ হাজার ফুট গভীর।

হেলস গিরিখাত

যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো-অরেগন সীমান্তে অবস্থিত হেলস গিরিখাত ১২৫ মাইল লম্বা। এই গিরিখাতের প্রায় ৪০ মাইল অংশ এক মাইলের বেশি গভীর। সবচেয়ে গভীর অংশের গভীরতা ৭ হাজার ৯০০ ফুট। স্নেক নদীর চলার পথে অবস্থিত এই গিরিখাতটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে গভীর গিরিখাত। এই গিরিখাতের দেয়ালগুলো হলুদ, লাল ও কমলা রঙের, যা স্থানটিকে নাটকীয় রূপ দিয়েছে।

গ্র্যান্ড গিরিখাত  
হাজার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর জলপ্রবাহ থেকে ভূমি ক্ষয় হয়ে গ্র্যান্ড গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের একেবারে উত্তর–পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই গিরিখাতটি ২৭৭ মাইল লম্বা এবং ১৮ মাইল চওড়া। এটির গভীরতা সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৯৩ ফুট পর্যন্ত পৌঁছেছে।  গ্র্যান্ড গিরিখাতের সবচেয়ে সুন্দর এবং গভীরতম অংশটি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পাওয়েল হ্রদ থেকে মেড হ্রদ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ দশমিক ৯ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।
 
কটাহুয়াসি গিরিখাত
পেরুর খরস্রোতা কটাহুয়াসি নদীর জলপ্রবাহের কারণে ভূমি ক্ষয় হয়ে কাটাহুয়াসি গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছে। ১১ হাজার ৪ ফুট গভীর এই গিরিখাতটি বিশ্বের গভীরতম গিরিখাতের একটি। দুটি বিশাল পর্বতমালা ক্ষয়ে গিয়ে এই গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র: ওয়ার্ল্ডঅ্যাটলাস

আপনার মতামত দিন