সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য আছে সুখবর। কক্সবাজারের বিভিন্ন রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল বুকিংয়ে মিলছে আকর্ষণীয় অফার। সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে। চলবে নভেম্বর পর্যন্ত; এই সময়ে ভ্রমণার্থীরা পাচ্ছেন ৩০-৬০% ছাড়।
দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ শেষে খানিকটা স্বস্তির সন্ধানে ভ্রমণপিয়াসুরা ছুটছেন নতুন বা পুরোনো গন্তব্যে। বাংলাদেশের পর্যটকদের প্রথম পছন্দই বলা চলে কক্সবাজার। বলা যায়, এখনই সময় কক্সবাজার ভ্রমণের। কারণ, সেখানে চলছে আকর্ষণীয় ছাড়। চলবেও বেশ অনেক দিন।
এ ছাড়া বিভিন্ন রিসোর্টে আছে খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে দিনব্যাপী প্যাকেজের ব্যবস্থা। মারমেইড বিচ ক্যাফে, মুন নেস্ট, কক্সবাজার লংবিচ, ইনানী ডেরা রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, নিসর্গ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, মৌ রিসোর্টসহ অনেকে এই তালিকায়।
কক্সবাজার গেলে আমরা সাধারণ পরিচিত গন্তব্যের বাইরে যেতে চাই না। অথচ নতুন গন্তব্যে গেলে নতুনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। এ জন্য আপনাদের জন্য থাকল এমন পাঁচটি স্থানের সন্ধান, যেখানে পর্যটকেরা সচরাচর যান না।
১.কলাতলী থেকে পাটুয়ার টেক-শ্যামলাপুর সৈকত
মানুষ কক্সবাজারে গেলে সাধারণত লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা ও কলাতলী-এই জায়গাগুলোতেই যায়। কিন্তু কক্সবাজারে এমন কিছু অসাধারণ নির্জন সমুদ্রসৈকত রয়েছে, যা এককথায় দারুণ অনুভূতি দেবে। কক্সবাজারের ডলফিন পয়েন্ট থেকে পাটুয়ার টেক পার হয়ে শ্যামলাপুর বিচের দূরত্ব প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো। সিএনজি, চান্দের গাড়ি সহজেই পাওয়া যাবে। সারা দিনের জন্য দরদাম করে ভাড়া করলে দেড় হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। যাওয়ার পথে এক পাশে ঝাউবন, আরেক পাশে পাহাড় আর সমুদ্রসৈকতের মনোরম দৃশ্য, মৃদুমন্দ বাতাস ও সমুদ্রের গর্জন মুগ্ধ করবে।
শ্যামলাপুর সৈকত অতটা পরিচিত নয়। ফলে পর্যটকদের বেশ নির্জন, ভিড় একেবারেই কম। ঝাউবন, সারি সারি সাম্পান নৌকা মুগ্ধ করবে আপনাকে। এই বিচ থেকে ১৭ কিলোমিটার পেছনে গেলে পাটুয়ার টেক সৈকত। শ্যামলাপুর বিচের তুলনায় পাটুয়ার টেক সৈকত বেশ ব্যস্ত। মানুষের ভিড়ও বেশি। এখানে মূল আকর্ষণ হচ্ছে মোটররাইড ৩০০-৬০০ টাকার মধ্যে। ৬০০ টাকার রাইডে আপনি যেতে পারবেন লাল কাঁকড়ার সৈকতে। অভূতপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে আসতে হবে এখানে।
২.রিজু খাল কায়াকিং ও সালসা সৈকত
ইনানী সৈকতের আগেই পড়বে রিজু খাল; এর উৎপত্তি মিয়ানমার। এখানে এসে পানি বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। এখানে আছে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা। দুজনের আধা ঘণ্টা কায়াকিং করার জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। এর পরেই আছে সালসা সৈকত, যেখানে নানা রকম স্থানীয় ফল দিয়ে বুফের মতো করে পরিবেশন করা হয়। একে কাঁকড়া বিচও বলা হয়ে থাকে।
এখানে আরও আছে প্যারাসেইলিংয়ের ব্যবস্থা। রিজু খালের অনেকটা অংশ কাঠের সেতু বেয়ে পার হয়ে যেতে হবে সালসা বিচের প্যারাসেইলিং পয়েন্টে। সেতু পার করেই দুপাশে ঝাউবনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সমুদ্রসৈকতে। এর দৃশ্য অন্য সব সৈকতের চেয়ে নিঃসন্দেহে আলাদা। প্যারাসেইলিংয়ে পাবেন দুটি প্যাকেজ-দুই থেকে আড়াই কিলোর জন্য ২০০০ টাকা আর আড়াই থেকে তিন কিলোর জন্য ২৫০০ টাকা, সঙ্গে বাড়তি হিসেবে সমুদ্রের জলে পা ছোঁয়াবার সুযোগও আছে।
৩.দরিয়ার নগর সৈকত
এখানেও আছে প্যারাসেইলিংয়ের ব্যবস্থা। সূর্যাস্তের সময় প্যারাসেইলিং দারুণ এক অভিজ্ঞতা হতে পারে। পারাসেইলিংয়ের খরচ সালসা বিচের মতোই হবে। এখানকার খাবার অতটা ভালো নয়। সবচেয়ে ভালো হয় শহরে ফিরে খাওয়াদাওয়া করলে।
৪.সি পার্ল ওয়াটার পার্ক
সি পার্ল ওয়াটার পার্ক যেতে হলে কলাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে হোটেল সি ক্রাউন গিয়ে বাস ধরতে হবে। কারণ, সেখান থেকে পার্কের উদ্দেশে বাসে ছাড়ে সকাল সাড়ে ১০টায়। জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা। এই বাস মিস করলে অটোরিকশা বা মাইক্রোবাসেও যাওয়া যাবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা। ওয়াটার পার্কে ঢোকার টিকিট জনপ্রতি ৬০০ টাকা।
টিকিটের সঙ্গে থাকবে আটটি রাইড-থান্ডারবোল, ওপেন স্লাইড, মাল্টিল্যান্ড, উইন্ড স্টর্ম, কামাকাজি রাইড ও অ্যাকুয়ালোভ। এই রাইডগুলো হবে পানির মধ্যে; তাই সঙ্গে করে বাড়তি কাপড় নিয়ে যেতে হবে। না হলেও অসুবিধা নেই। এখানে কাপড় কেনার ব্যবস্থা আছে। আছে প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য লকার। এ ছাড়া আছে দুটি ড্রাই রাইড। এ ছাড়া আছে রেইন ড্যান্স, ফান পুল, ফাইভ ডি সিনেমা। ভেতরে রয়েছে রেস্টুরেন্ট। হালকা আর ভারি সব খাবারই মিলবে। এই পার্ক বিকেল পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যায়।
৫.টেকনাফ জেটিঘাট ও বাহারছড়া
কক্সবাজার ডলফিন মোড় থেকে ভাড়া করা গাড়ি, চান্দের গাড়ি, অটোরিকশায় করে যাওয়া যাবে টেকনাফে। এখানকার জেটিঘাট অসম্ভব সুন্দর। প্রচুর বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য হচ্ছে এই টেকনাফ। বাহারছড়া মূলত কচ্ছপের রাজত্ব। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা এখান থেকে ট্রলার ভাড়া নিয়ে চলে যেতে পারবেন মাঝ সমুদ্রে। উপভোগ করতে পারবেন মাঝসমুদ্রের নিস্তব্ধতা আর জেলেদের জীবন। কক্সবাজারে অনেকেই গেছেন। এই সময়ে ছাড়ের সুযোগ নিয়ে নতুন এই গন্তব্যগুলো এক্সপ্লোর করে উপভোগ করা যেতে পারে কক্সবাজারের অন্যতম সৌন্দর্য। সূত্র: হাল ফ্যাশন
লেখা: নাদিয়া ইসলাম