দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, মেধাবী যুবসমাজকে আইসিটি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যে পেশাগুলোর সাথে উদ্যোক্তা বা কর্মী হিসাবে ব্যাপকভাবে যুক্ত করা যায় তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, সকল ধরনের নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে সেবার মান বাড়ানো ও দুর্নীতি নির্মূলে আধুনিক প্রযুক্তির (যেমন এআই, ব্লক চেইন ইত্যাদি) ব্যবহার বাড়ানো, ক্যাশলেস লেনদেনের ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে সকল ধরনের ব্যবসা বাণিজ্যে (ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্যসহ) উৎপাদনশীলতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ভিত্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০টি সুপারিশ তৈরি করেছেন একদল তথ্যপ্রযুক্তিপ্রেমী ও উদ্যোক্তা নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের হাতে এই সুপারিশগুলো তুলে দেন তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক বেসিস সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, বেসিস ফিনটেক স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ার এবং সূর্যমুখী লিমিটেড ও আদর্শ প্রাণিসেবা লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ফিদা হক, অবাক টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও পেমেন্ট গেইটওয়ে বিশেষজ্ঞ দিদারুল ভূঁইয়া।
অবাক টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও পেমেন্ট গেইটওয়ে বিশেষজ্ঞ দিদারুল ভূঁইয়া জানিয়েছেন, আমরা কয়েকজন আইটি উদ্যোক্তা আইসিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য স্ব-উদ্যোগে একটি রিফর্ম পলিসি ড্রাফট বানিয়েছি। সেটা ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের হাতে হাতে তুলে দিয়েছি। উপদেষ্টা সেটা আন্তরিকতা ও আগ্রহের সাথে গ্রহণ করে আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এবং এ প্রস্তাবনা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সময় এবং সুযোগের অভাবে আমরা সকল ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের সাথে মত বিনিময় করতে পারিনি। সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
তিনি বলেন, আমরা অনুরোধ করবো ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টরা সংযুক্ত আইসিটি রিফর্ম পলিসিটি দেখবেন এবং আপনাদের মতামত যুক্ত করবেন। সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা এই প্রস্তাবনা সমৃদ্ধ করে উপদেষ্টার কাছে আবারো পৌঁছে দিবো।
প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গঠনের ২০ সুপারিশ
ডাটার দাম ও কল রেট যৌক্তিকীকরণ/হ্রাস ও ইন্টারনেট পরিকাঠামো পর্যালোচনা
(ক) দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ডাটা মূল্য হ্রাসের (অতি সত্ত্বর ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে মূল্য হ্রাস) প্রস্তাবনা তৈরি করতে টেলিকম ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন।
(খ) বাংলাদেশে ইন্টারনেট সরবরাহের বিভিন্ন উপাদান/লেয়ার আসলে কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে এগুলো থেকে 'মনোপলি' নির্মূল করা যেতে পারে, কীভাবে খরচ কমানো যেতে পারে- সেগুলো নির্ধারণে একটি এক্সপার্ট কমিটি গঠন করে তার সুপারিশ বাস্তবায়ন।
স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি
দেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী (বিশেষ করে নিম্ন আয়ের লোকজন) যাতে সহজে খুব কম/শূন্য ডাউনপেমেন্ট দিয়ে স্মার্টফোন কেনা ও ব্যবহার করার সুযোগ পেতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে টেলিকম কোম্পানিগুলি ও অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও তার বাস্তবায়ন।
সরকারি ও অতি জরুরি সেবায় টোল-ফ্রি (অ্যাপের ক্ষেত্রে বিনা ডাটা খরচে) এক্সেস
বর্তমানে বেশির ভাগ সরকারি বা বেসরকারি নাগরিক সেবা ক্ষেত্রে কোনো টোল ফ্রি নাম্বার নেই। উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও যেকোনো নাগরিক সেবা (যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইনি সহায়তা, কমপ্লেইন ইত্যাদি) ক্ষেত্রে টোল ফ্রি ব্যবস্থা করা বাধতামূলক করা উচিত।
নাগরিকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় হওয়া বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ (যেগুলো প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা জরুরি) অনেক ক্ষেত্রেই ডাটা ব্যালান্স না থাকার কারণে ইউজাররা ব্যবহার করতে পারে না। বিকাশ, নগদ, পাঠাও, উবার বা অন্য যেকোনো জনপ্রিয় মোবাইল অ্যাপ যাতে ডাটা ব্যালেন্স না থাকলেও ব্যবহার করা যায় সেই ব্যাপারে টেলিকম কোম্পানি ও অ্যাপ কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান (এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে যেভাবে প্রয়োজনীয় খরচ/ভর্তুকি সংস্থান করা হয়, সেই নিয়মেই সেটা করা যেতে পারে)।
সারাদেশে ইন্টারনেটের লভ্যতা এবং মান নিশ্চিতকরণ
ইন্টারনেট অ্যাক্সেস (সারাদেশে ৪জি নিশ্চিতকরণ ও ৫জি সম্প্রসারণ), গতিবৃদ্ধি (টেলিটক এবং অন্যান্য সরকারি অপারেটরদের পুনর্গঠনসহ) এবং সঠিক টেকনিক্যাল অডিটের মাধ্যমে সারাদেশে ইন্টারনেটের লভ্যতা এবং মান নিশ্চিতকরণ।
সাইবার সিকিউরিটি সক্ষমতা পর্যালোচনা ও নিশ্চিতকরণ
রাষ্ট্রীয় ডাটা অবকাঠামোগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু হ্যাকিং ও ডাটা চুরি ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করতে সিকিউরিটি এক্সপার্টদের নিয়ে একটি এক্সপার্ট কমিটি গঠন। এই কমিটি আগামী ১ মাসের মধ্যে দেশের বিভিন্ন ডাটা অবকাঠামোতে (ব্যাংকিং সিস্টেমসহ) সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিতকল্পে আশু করণীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করবে।
ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যা সমাধানে টাস্ক ফোর্স তৈরি ও পদক্ষেপ গ্রহণ
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যাগুলো (পেমেন্ট, ক্যাশ ইনসেনটিভ ইত্যাদি) পর্যালোচনা জন্য এই খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, যারা সুপারিশ করবে কিভাবে অতি দ্রুত সময়ে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায় এবং এক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে নিচের পদক্ষেপগুলো জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া যেতে পারে-
>>পেপ্যাল এবং স্ট্রাইপ দেশে নিয়ে আসার জন্য জরুরি স্টেপ নেওয়া প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্স রেমিট্যান্স-এর উপরে প্রণোদনার সিস্টেম সহজ করা।
>>ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অতি প্রয়োজনীয়/বেশি ব্যবহৃত কম্পিউটার ডিভাইস (যেমন হাই এন্ড কম্পিউটার, বড় মনিটর ইত্যাদি) সহজলোভ্য করা (আমদানি শুল্ক কমানো)।
>>আগামী ১০ বছরের জন্য ফ্রিল্যান্সারদের ইনকামের উপরে ট্যাক্স মওকুফ করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে কাজ করা। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সারদের আয়কর রিটার্নে আয়কর কর্মকর্মর্তাদের অযথা হয়রানি বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ।
>>ফ্রিল্যান্সারদের যাতে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সহজে দেশে সহজে আন্তে পারে এবং ব্যবসার প্রয়োজনে সেই টাকা বিদেশে পেমেন্ট করতে পারে (বিদেশী মুদ্রা একাউন্টে জমা রাখা নিজস্ব অর্থ) সেটি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ।
অনলাইন জুয়া প্রসার ও অন্যান্য সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে সমন্বয়
তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া অনলাইন জুয়ার প্রসার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিআইএফইউ, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, সিআইডি, বিটিআরসি ও সরকারের অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় করে একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও তার দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। অন্যান্য সাইবার ক্রাইমের প্রকৃতি ও উৎস নির্ধারণ এবং তার ব্যাপারে রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্কতামূলক তথ্য, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করতে একটি কমিটি করা হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক আইসিটি সার্ভিস রপ্তানি বৃদ্ধি
বর্তমানে ৬০০ মিলিয়ন আইসিটি সেবা রপ্তানির ৭০% এর বেশি আসে হাজারখানেক আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান থেকে। সরকারের পক্ষ থেকে আশু কিছু পদক্ষেপ নিলে এই রপ্তানির পরিমাণ আগামী ২ বছরে ২-৩ গুন করা সম্ভব। এই ব্যাপারে একটি স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য এই খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মাঝারি একটি কমিটি তৈরি যারা নিম্নের ব্যাপারগুলো নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করবে-
>> ৫০০-১,০০০ কোম্পানি বাছাই করা যাদেরকে কৌশলগত ভাবে সহায়তা দেওয়া যাতে তারা আগামী ২ বছরে নূন্যতম ২-৩ গুন রপ্তানি করতে পারে।
>> বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে গাইড করা যাতে তারা রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
>> প্রবাসী বাংলাদেশীদের ডাটাবেস তৈরি করে তাদেরকে এনগেজ করা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য।
বিদেশি সফটওয়্যারের ব্যবহার ও নির্ভরশীলতা হ্রাস
রিজার্ভের উপর চাপ কমানো (দেশে প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি সফটওয়্যার বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আমদানি হয়) ও দেশীয় সফটওয়্যার খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আগামী দুই বছরের জন্য সরকারি এ বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে বিদেশি সফটওয়্যার কেনা বন্ধ/কমাতে হবে (ছাড় দেওয়া যেতে পারল সকল সফটওয়্যার দেশে প্রস্তুত হয় না-যেমন সিকিউরিটি, ডাটাবেস ইত্যাদির ক্ষেত্রে)। আইসিটি ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী প্রাঅনাবলের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে এর কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে।
উন্নয়ন সেক্টরের সংস্থাগুলোর, যেমন জাতিসংঘ শাখাসমূহের, পিকেএসএফ, ইডকল, দেশী ও আন্তর্জাতিক এনজিও-দের এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বছরে বড় একটা বাজেট থাকে। সব উন্নয়ন প্রকল্পেই কোন না কোন ভাবে আইসিটি প্রযুক্তি ব্যবহার হয় বিধায় এখান থেকে আইসিটি খাতে বড় কর্ম সংস্থান হতে পারে যা বর্তমানে হয়না। উপরন্তু দেখা যায় প্রকল্প শেষ হলে প্রকল্পের ফলাফলের চর্চাও আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরজন্য নিয়ম করে সব উন্নয়ন প্রকল্পেই মিশ্র পদ্ধতিতে (blended mode) বেসরকারি আইসিটি (এবং অন্যান্য) খাতকে শুরু থেকেই অংশীজন হিসাবে রাখাটা জরুরী। যে কোন নতুন প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী সফলতা এবং বাণিজ্যিকভাবে টিকে থাকার জন্য এটা খুবই জরুরি।
জাতীয় এআই ও ব্লকচেইন কৌশল এবং রোডম্যাপ
বাংলাদেশে এআই ও ব্লকচেইন (ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার) প্রযুক্তি কোন কোন ক্ষেত্রে অতিসত্বর ব্যবহার করা যেতে পারে, বর্তমান প্রতিবন্ধকতাগুলি কি এবং এআই অপব্যবহার রোধ করার কৌশল নির্ধারণে একটি কর্ম পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ও স্ট্রাটেজি তৈরি করার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন
স্টার্টআপ ও ডিজিটাল কমার্স বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ
(ক) বিভিন্ন ব্যাংকে স্টার্ট আপ সেক্টরে বিনিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করার ব্যবস্থা করতে হবে (প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধন করতে হবে)।
(খ) স্টার্টআপ খাতে দেশের পুজিঁবাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগ সুযোগ তৈ রি করতে পুজিঁ বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (SEC) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করা যাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো যায় এবং বিনিয়োগকারীদের (মাইনরিটি শেয়ারহোল্ডারসহ) স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায়।
অতি জরুরি নাগরিক সেবাসমূহ ডিজিটাইজেশন
নীচের জরুরি সার্ভিসগুলো যাতে সহজেই অনলাইন সিস্টেম (কোনো ধরণের অফিস ভিসিট ছাড়াই) একজন নাগরিক সার্ভিসগুলো পেতে পারে (ট্র্যাকিং ব্যবস্থাসহ)
>> অনলাইন জিডি
>> প্রিপেইড বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ
>> ট্রেড লাইসেন্স
>> ড্রাইভিং লাইসেন্স
>> এনআইডি সংশোধন
>> জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট।
১৩ ভবিষতের সকল প্রযুক্তি সংক্রান্ত ক্রয় প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ উপায়ে সম্পাদিত হয় সেটির জন্য একটি 'ফ্রেমওয়ার্ক (ইন্ডিপেন্ডেন্ট/স্বাধীন অডিট প্রসেসসহ) তৈরী করা হবে যাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় (সাম্প্রতিক প্রজেক্টগুলোর অভিজ্ঞতাও এক্ষেত্রে বিবেচনায় আনতে হবে)।
>> যোগ্য ভেন্ডর নির্বাচন
>> প্রকল্প বাস্তবায়নের গুনগত মান নিশ্চিতকরণ তহবিলের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার ও অপচয় রোধ
>> পোস্ট-কমিশন/বাস্তবায়ন মূল্যায়ন।
টেন্ডারিং সিস্টেম
টেন্ডার সিস্টেম আরও স্বচ্ছ করা হোক। আইসটি বিভাগের প্রজেক্টগুলোর কাজ যেন যোগ্য লোক বা প্রতিষ্ঠান পায় সেটা নিশ্চিত করা দরকার। এখানে নিম্নোল্লেখিত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।
ক) আইসটি প্রজেক্টগুলোকে বেশীরভাগ সময়েই মডিউলে বা ধাপে ভাগ করা যায়। তাই প্রজেক্ট বাজেট নির্দিষ্ট একটা পরিমাণের চেয়ে বেশী হলে (৫ কোটি টাকা?) একটা প্রজেক্টকে এককভাবে কোন কোম্পানিকে না দিয়ে মডিউল হিসাবে একাধিক কোম্পানির মাঝে ভাগ করে দিলে দুর্নীতি, প্রজেক্ট অসফল হওয়ার সম্ভাবনা এবং বাস্তবায়নের সময়কাল তিনটা বিষয়ই কমে আসবে।
খ) সরকারিপক্ষে যারা প্রজেক্ট ডিরেক্টর এবং সহকারী প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসাবে থাকেন, তাঁদের প্রজেক্ট পরিচালনা দক্ষতা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর দরকার আছে। প্রজেক্টের ফলাফল হিসাবে যে প্ল্যাটফর্মগুলো নির্মিত হয় বিশেষ করে আই ও টি-র ক্ষেত্রে সেগুলোর ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ব্যবহারকারীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
আইসিটি বিভাগের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির ব্যাপক পরিবর্তন
>>বিসিসি ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠন (ইক্যাব, বেসিস ইত্যাদি) আইসিটি ট্রেনিইং-এর নাম করে যেভাবে সরকারী অর্থের অপচয় করছে এবং অত্যন্ত নিম্নমানের ট্রেনিইং দিচ্ছে এগুলো বন্ধ করা হোক। শুধুমাত্র যেসকল বিশেষায়িত ট্রেনিং যেগুলো বাজারে এভেইলেবল না সেগুলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
>>প্রাইভেট সেক্টরকে (বিশেষ করে যারা ই-লার্নিং পদ্ধিতিতে স্বল্প খরচে কোডিংসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি ট্রেনিং করাচ্ছে) তাদেরকে নীতিগত সহায়তা প্রদান। এক্ষেত্রে এক্রিডেশন ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
>> অস্বচ্ছল ট্রেইনীদের স্কলারশিপ প্রদান করা যাতে তারা বাজারে এক্রেডিটেড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে বিনা/কম খরচে ট্রেন্ডিং নিতে পারে। এছাড়াও ইন্টারনেশনাল সার্টিফিকেশন টেস্ট যাতে প্রফেশনালরা নিতে পারে সেই ব্যাপারে সরকারি সহায়তা দেওয়া দরকার।
>> মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যায়ে ই-লার্নিং ও ব্লেন্ডিং লার্নিং মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষক-স্বল্পতা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ
>> পাঠ্য বইয়ে এবং ব্যবহারিক শিক্ষায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সংক্রান্ত প্রযুক্তিগুলো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, আইওটি, ব্লকচেইন, বিগ ডাটা যেন সহজবোধ্য এবং হৃদয়গ্রাহী ভাবে উপস্থাপন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে
সর্বক্ষেত্রে (ক্ষুদ্র ব্যবসা ও দোকানসহ) ডিজিটাল/ক্যাশলেস পেমেন্ট ও ট্রান্সফার প্রচলন
>> বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় QR কোড ভিত্তিক পেমেন্টের ব্যাপক প্রচলন বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট নীতিমালায় সংশোধন করা জরুরি। এছাড়াও ব্যাংকগুলোকে ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস গুলোকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যান্য পেমেন্ট ইকোসিস্টেম অপারেটরদের (পিএসপি, পিএসও ইত্যাদি) জন্য অবৈষম্যমূলক নীতি নিশ্চিত করতে হবে।
>> ডাটা ব্যালেন্স ছাড়াও যাতে ব্যাংক বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহারকারীরা QR কোড ভিত্তিক পেমেন্ট অ্যাপ দিয়ে করতে পারে সেটির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সিস্টেম কে মূল ভিত্তি রেখে জাতীয় ডেটা প্ল্যাটফর্ম এবং ডাটা বিনিময় (Data Exchange Platform) আর্কিটেকচার তৈরি করার জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন যার মূল উদ্দশ্য হবে-
(ক) একটি ন্যাশনাল আর্কিটেকচার এবং ফ্রেমওয়ার্ক শুরু করা উচিত যাতে দেশের যেকোনো নাগরিক তাৎক্ষণিকভাবে তার নিজের সমস্ত ডেটা (সম্পত্তি, লেনদেন এবং তার নিজের মালিকানাধীন অন্যান্য ডিজিটাল ডেটা) অ্যাক্সেস করতে পারে এবং তার নিজের সিদ্ধান্ত (সম্মতি) অনুযায়ী শেয়ার করতে পারে।
(খ) সমস্ত নাগরিক পরিষেবার জন্য Interoperability গাইডলাইন (API-এর মাধ্যমে) তৈরি।
নিম্নলিখিত বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করে নিম্নোক্ত নীতি/গাইডলাইন প্রবিধান প্রণয়ন এবং সমন্বয়করণ/বাস্তবায়ন।
(ক) ডাটা সুরক্ষা, মালিকানা এবং শেয়ারিং নীতিমালা (EU GDPR-এর আদলে) প্রণয়ন।
(খ) পিএসডি২ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সমন্বয়।
জাতীয় আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস) কৌশল এবং রোডম্যাপ
>> আইওটি হার্ডওয়ার-এর স্থানীয় ডিজাইন, প্রটোটাইপিং এবং উৎপাদন নিশ্চিত করতে পিসিবি (PCB) বোর্ড প্রিন্টিং এবং পিক-এন্ড-প্লেস (pick-and-place) মেশিনের উপস্থিতি ও ব্যবহার সহজলভ্য করা। এক্ষেত্রে হাই-টেক পার্কগুলোতে পিক-এন্ড-প্লেস মেশিন এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান রেখে (চাইলে তরুণেরা নিজেরাই এই কাজ করতে পারে) তরুণ উদ্যোক্তাদের একটা অতি জরুরী সার্ভিস দেওয়া দীর্ঘমেয়াদে মৌলিক পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
>> বড় আকারের সিস্টেম বাস্তবায়নের যেমন স্মার্ট মিটারিং, কৃষি, ইত্যাদি NBIOT, LORA, ইত্যাদি প্রয়োজন। এই নেটওয়ার্ক পরিকাঠামোর জন্য টেলিকম কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ।
>>বিশ্ববদ্যালয় ও অন্যান্য কারিগটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমবেডেড সিস্টেম ডিজাইনে দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে উদ্যোগ গ্রহণ যাতে তারা পিসিবি এবং এস এম ডি কম্পোনেন্ট ব্যবহার করে প্রোটোটাইপ ডিজাইন করতে সক্ষম হয়।
প্রজেক্ট ডেলিভারির পর মালিকানার অভাব: অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে ক্লায়েন্টের কাছে প্রজেক্ট ডেলিভারির পর ডিভাইসের যত্ন নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি বা দল থাকে না। সাধারণত ।০০ প্রকল্পগুলো প্রাথমিকভাবে কিছু না কিছু নিরীক্ষণের জন্য এবং পরে বিশ্লেষণভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে - বিশেষ করে সরকারী সংস্থাগুলোতে বেশিরভাগ সময় এমন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ থাকে না যে সিস্টেমের সাথে অর্থপূর্ণভাবে ইন্টারেক্ট করেছে, ফলে প্রকৃত সুবিধাগুলি দরকারের সময় আর পাওয়া যায়না।
অ্যাপ মনিটাইজেশন সহজিকরণ
>>মোবাইল অ্যাপ থেকে সাবস্ক্রিপশনের ভিত্তিতে বা ইন-অ্যাপ বিক্রয় থেকে অর্থোপার্জনের পথকে সুগম করতে হবে। এজন্য গুগল পেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ।
দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্প স্থাপনে সহায়তা নিশ্চিতকরণ
>>সরকারি যেকোনো তথ্যপ্রযুক্তি হার্ডওয়্যার ক্রয়ের ক্ষেত্রে আগামী ৩ বছরের মধ্যে অন্তত ৪০% হার্ডওয়্যার দেশীয় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কেনার বাধ্যতামূলক করার নীতি প্রণয়ন।
>>দেশীয় হার্ডওয়ার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইওটি ডিভাইসসহ) ক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ/পার্টস আমদানি শূন্য শুল্ক ও শুন্য ভ্যাট সহায়তা প্রদান।
স্বেচ্ছায় ও স্ব-উদ্যোগে সুপারিশগুলো তৈরি করছেন বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক বেসিস সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, বেসিস ফিনটেক স্ট্যান্ডিং কমিটির কো চেয়ার এবং সূর্যমুখী লিমিটেড ও আদর্শ প্রাণিসেবা লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ফিদা হক,টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক ও গবেষক ফায়েজ আহমেদ তাইয়েব, ফ্রিল্যান্সার হাসিন হায়দার এবং অবাক টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও পেমেন্ট গেইটওয়ে বিশেষজ্ঞ দিদারুল ভূঁইয়া।