আবারও স্টারলিংক সংযোগ বিভ্রাট: স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নির্ভরতা নিয়ে ব্যবহারকারীর উদ্বেগ

প্রকাশ: রবিবার, ০৩ অগাস্ট, ২০২৫
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

কল্পনা করুন, আপনি পাহাড়ঘেরা কোনও গ্রামে বসে অনলাইনে ক্লাস করছেন বা দূরবর্তী অফিসের কাজ সারছেন। আর ঠিক তখনই ইন্টারনেট চলে যায়, মাঝপথে ছিঁড়ে যায় আপনার যোগাযোগের শেষ সেতুটি। স্পেসএক্স-এর স্টারলিংক এমন অনেক মানুষের জন্য ছিল এক নতুন সম্ভাবনার নাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক সংযোগ বিভ্রাট যেন সেই আশার জায়গাতেই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।

বারবার স্টারলিংকের সংযোগ বিভ্রাটের কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবারের বিভ্রাট ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে তাঁদের জন্য, যাদের বিকল্প ইন্টারনেট সহজলভ্য নয়।

ব্যবহারকারীদের অভিযোগ: ‘আবারও সংযোগ নেই’
গত বৃহস্পতিবার, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা থেকে স্টারলিংক ব্যবহারকারীরা রেডিট এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংযোগ সমস্যার অভিযোগ জানান। এক রেডিট ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আবারও সংযোগ নেই। বাড়ি থেকে কাজ (WFH) করার জন্য এটা মোটেও ভালো না।” এই মন্তব্য অনেক গ্রাহকের হতাশা প্রতিফলিত করে।বিশেষত তাদের জন্য যারা স্টারলিংককে তাদের একমাত্র উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

ডাউনডিটেকটরে রিপোর্ট বৃদ্ধির পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক
সংযোগ বিভ্রাটের সময় ডাউনডিক্টেটর ডটকমে স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে সংযোগ সমস্যার রিপোর্ট হঠাৎ বেড়ে যায়। যদিও পরে তা দ্রুত কমে আসে, যা ইঙ্গিত দেয় স্পেসএক্স দ্রুততার সঙ্গে সমস্যার সমাধানে কাজ করেছে।

একজন সক্রিয় ব্যবহারকারী জানান, “২-৩ মিনিট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন আবার চালু হয়েছে।” তবে কেউ কেউ জানিয়েছেন, সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী ছিল এবং পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে।

বিশ্লেষকদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন
যেখানে অনেক ব্যবহারকারী সংযোগ সমস্যায় ভুগেছেন, সেখানে পিসিম্যাগের প্রযুক্তি বিশ্লেষক ব্রায়ান ওয়েস্টওভার জানিয়েছেন, তিনি কোনো ধরনের সংযোগ সমস্যার সম্মুখীন হননি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে বিভ্রাটটি হয়তো অঞ্চলভেদে ভিন্ন মাত্রার ছিল।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় বিভ্রাট: কি হচ্ছে স্টারলিংকে?
এই সমস্যাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ব্যবহারকারীরা ঠিক এক সপ্তাহ আগে ২৪ জুলাই ২০২৫-এ বড় ধরনের একটি বিভ্রাট পার করেছেন। ওই সময় তিন ঘণ্টাব্যাপী বিশ্বব্যাপী সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং কেউ কেউ জানিয়েছিলেন, বিভ্রাটের প্রভাব পরদিন পর্যন্ত টিকে ছিল।

স্পেসএক্স জানিয়েছিল, ওই বিভ্রাটের কারণ ছিল তাদের নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর আপগ্রেড। প্রতিষ্ঠানটি নতুন সফটওয়্যার ইনস্টল করেছিল গ্রাউন্ড-ভিত্তিক ‘কমপিউট ক্লাস্টার’-এ, যা স্যাটেলাইট ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে।

স্টারলিংকের বিস্তার ও বাস্তবতা
বর্তমানে স্টারলিংকের গ্রাহক সংখ্যা ৬ মিলিয়নের বেশি। এসব ব্যবহারকারীর বড় একটি অংশ বসবাস করেন দুর্গম ও গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে প্রচলিত ব্রডব্যান্ড সহজলভ্য নয়। তাই স্টারলিংক শুধু বিলাস নয়, বরং তাদের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সমাধান। এমন পরিস্থিতিতে বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যারা WFH, টেলিমেডিসিন, বা অনলাইন শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল।

 গ্রাহকদের করণীয় কী?
স্পেসএক্স তাদের আগের বিভ্রাটের পর গ্রাহকদের কিছু পরামর্শ দিয়েছিল, বিশেষ করে যারা থার্ড-পার্টি রাউটার বা ডিভাইস ব্যবহার করেন। তারা বলেছে, “যদি কেউ এখনো সংযোগ সমস্যায় পড়েন, তবে স্টারলিংকের সঙ্গে যুক্ত থার্ড-পার্টি যন্ত্রাংশগুলো পোর্ট থেকে খুলে নিয়ে আবার চালু করে দেখতে পারেন।”

এটি সাধারণভাবে রিস্টার্ট করার মতো হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা কাজ করে।

 প্রযুক্তির জটিলতা আর ব্যবহারকারীর প্রত্যাশা
স্টারলিংকের মতো একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প যেখানে পুরো পৃথিবীকে ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে আনার লক্ষ্য রয়েছে, সেখানে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু যখন সেই সমস্যা ঘন ঘন হয় এবং তার প্রভাব সরাসরি জীবিকা ও জীবনের উপর পড়ে, তখন প্রশ্ন ওঠে, এই নির্ভরশীলতা কতটা নিরাপদ? স্টারলিংকের আগামী দিনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা হয়তো আরও উন্নত হবে। কিন্তু তার আগে প্রতিষ্ঠানটির উচিত ব্যবহারকারীদের প্রতি স্বচ্ছতা ও প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থায় আরও আন্তরিক হওয়া। সূত্র: পিসিম্যাগ

image

আপনার মতামত দিন