আসছে গুগলের  ভার্চুয়াল এআই স্যাটেলাইট ‘আলফাআর্থ ফাউন্ডেশন’ 

প্রকাশ: রবিবার, ০৩ অগাস্ট, ২০২৫
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://mail.techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তির দুনিয়ায় গুগল আবারও এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার তারা আনতে যাচ্ছে এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) মডেল, যা ভার্চুয়াল স্যাটেলাইটের মতো কাজ করবে। প্রকৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ এবং মানবিক কার্যকলাপ, সবকিছুর ওপর নজরদারি করবে এআই, সেটিও প্রচলিত স্যাটেলাইটের বিশাল খরচ ছাড়াই।

এই প্রকল্পের কেন্দ্রে রয়েছে ‘আলফাআর্থ ফাউন্ডেশন’ (AlphaEarth Foundation) নামের একটি শক্তিশালী মডেল, যা গুগলের তৈরি অপটিক্যাল স্যাটেলাইট, রাডার সেন্সর এবং জলবায়ু সিমুলেশনসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত উৎসের ডেটা বিশ্লেষণ করে কাজ করে। এর লক্ষ্য, বিশ্বকে আরও ভালোভাবে বুঝে ওঠা এবং তার পরিবেশগত গতিপ্রকৃতি নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করা।

কি আছে আলফাআর্থ মডেলের ভিতরে?
গুগলের দাবি, তাদের তৈরি এআই মডেলটি একাধারে সময় ও স্থানের ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় কাজ করতে পারে। এটি গুগল আর্থ ইঞ্জিনে পাওয়া ডেটার সাহায্যে স্থলভাগ এবং উপকূলীয় এলাকার পরিবেশগত পরিবর্তনগুলি দ্রুত, দক্ষ এবং সাশ্রয়ী উপায়ে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।

প্রতিটি ভৌগোলিক অঞ্চলকে ১০x১০ মিটার বর্গাকার সেলে ভাগ করে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি সেলের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোথায় গাছপালা বাড়ছে, কোথায় বন উজাড় হচ্ছে, কোন এলাকায় খরা বা প্লাবনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব তথ্য খুবই চিত্রিতভাবে উপস্থাপন করে মডেলটি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তিবিষয়ক ম্যাগাজিন ওয়েরিড জানিয়েছে, প্রতিটি বর্গাকার সেলকে বিভিন্ন রঙে চিহ্নিত করা হয়। এতে বোঝা যায়, কোথায় কী ধরনের গাছপালা, মাটির ধরন কিংবা পানির উপস্থিতি রয়েছে।

অ্যাপ্লিকেশন: শুধু উপগ্রহ চিত্র না, এক কার্যকর বিশ্লেষক
গুগল জানিয়েছে, এই মডেল পরিবেশগত গবেষণা ছাড়াও কৃষি ব্যবস্থাপনা, নগর পরিকল্পনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ পূর্বাভাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি প্রচলিত স্যাটেলাইট বিশ্লেষণ সিস্টেমের তুলনায় মাত্র ১/১৬ ভাগ জায়গা নেয় এবং ব্যবহার অনেক সহজ। বিজ্ঞানীরা সহজেই তাদের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী মানচিত্র তৈরি করতে পারেন, যেমন, ফসলের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, বন উজাড়ের গতি ট্র্যাক করা, শহরাঞ্চলের পরিবেশগত পরিবর্তন মূল্যায়ন ও বন্যা বা খরার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া।

উন্মুক্ত অ্যাক্সেস: গবেষণা সম্প্রসারণের নতুন দরজা
গত এক বছরে, গুগল তাদের তৈরি 'স্যাটেলাইট এমবেডিং ডেটাসেট' পরীক্ষামূলকভাবে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করতে দিয়েছে। এতে দেখা গেছে ব্যবহারকারীরা বাস্তব জীবনের গবেষণায় অত্যন্ত সফলভাবে এটি কাজে লাগিয়েছেন।

এখন এই ডেটাসেট গুগল আর্থ ইঞ্জিনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে গুগল। এর ফলে, পরিবেশবিজ্ঞানী, জলবায়ু গবেষক, উন্নয়ন কর্মী বা নগর পরিকল্পনাবিদ, সবাই নিজেদের গবেষণায় এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

গুগলের প্রতিনিধি কী বলছেন?
প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট এনগ্যাজেটকে গুগলের এক মুখপাত্র বলেন, “আলফাআর্থ ফাউন্ডেশন আমাদের পরিবর্তনশীল পৃথিবীর অবস্থা ও বিভিন্ন পরিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে এক বড় অগ্রগতি। এটি পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং ভূগোলভিত্তিক গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সহায়ক হবে।”

প্রযুক্তির বিকল্প নেই, তবে সতর্কতা প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এত বৃহৎ ও সহজে ব্যবহারযোগ্য স্যাটেলাইট ডেটার উন্মুক্ত হওয়া এক বিশাল অগ্রগতি। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি পরিবেশ পর্যবেক্ষণের খরচ কমিয়ে দিতে পারে। তবে এর সঙ্গে রয়েছে ডেটার স্বচ্ছতা ও নিরাপদ ব্যবহারের প্রশ্নও।

 এআই কি হবে ভবিষ্যতের পৃথিবী-পর্যবেক্ষক?
আলফাআর্থ ফাউন্ডেশন আমাদের চোখের সামনে খুলে দিচ্ছে এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। এখানে পৃথিবীর প্রতিটি কোণ নজরদারিতে থাকবে। আর সেই নজরদারি চালাবে কোনো কক্ষপথে থাকা উপগ্রহ নয়, বরং একটি শক্তিশালী এআই মডেল। এটি কি পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার একটি কার্যকর উপায়, নাকি প্রযুক্তির অতিনির্ভরতায় মানুষের ক্ষমতা হস্তান্তরের আরেক ধাপ? সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নিঃসন্দেহে, গুগলের এই পদক্ষেপ আগামী পৃথিবীকে আরও ভালোভাবে বোঝার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। সূত্রধ অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ

image

আপনার মতামত দিন